হঠাৎই সংজ্ঞাহীন, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও কেন বাঁচানো গেল না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং(Manmohan Singh), যিনি দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও উন্নতির পথে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ…

Former PM Manmohan Singh Passes Away: AIIMS Reveals Details of His Final Moments

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং(Manmohan Singh), যিনি দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও উন্নতির পথে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর (Manmohan Singh)বয়স ছিল ৯২ বছর। এই দুঃখজনক ঘটনাটি পুরো দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে শোকের ছায়া ফেলেছে।

মনমোহন সিংয়ের (Manmohan Singh) অসুস্থতার খবর ২৬ ডিসেম্বর রাতে প্রথমে আসে, যখন তিনি হঠাৎ করে বাড়িতেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত তাঁকে দিল্লির এইমস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী (Manmohan Singh) বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। যখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন তার অবস্থা ছিল অত্যন্ত সঙ্কটজনক। বহু প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, হাসপাতালে পৌঁছানোর পরও তাঁর জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়নি। অবশেষে, রাত ৯টা ৫১ মিনিটে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।

   

মনমোহন সিংয়ের (Manmohan Singh) প্রয়াণ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের সঞ্চার করেছে। তাঁর নেতৃত্বে ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী(Manmohan Singh)  হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছিল। তাঁর আমলে ভারতের অর্থনীতি বিশ্বে এক অন্যতম শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করেছিল। এমনকি, এক সময় যে ভারত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ে একটা অনিশ্চিত দেশে পরিণত হয়েছিল, মনমোহন সিংয়ের (Manmohan Singh) নেতৃত্বে তা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

মনমোহন সিংয়ের(Manmohan Singh)  অসুস্থতার খবর পাওয়ার পর, কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী হাসপাতালে গিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী খবর পাওয়ার পরই দিল্লি পৌঁছান, যদিও রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গে তখন কর্নাটকে দলীয় কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন। খবর পেয়ে তাঁরা সেখানকার সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করে দ্রুত দিল্লি ফিরেছেন। কংগ্রেস দল জানিয়ে দিয়েছে যে, আগামী ৭ দিন যাবত দলের সব কর্মসূচি বাতিল করা হবে।

মনমোহন সিংয়ের (Manmohan Singh) মৃত্যুর পর, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়কাল জুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। আজ, শুক্রবার, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর (Manmohan Singh) মৃত্যু শুধুমাত্র রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং তাঁর ব্যক্তিগত চরিত্র ও নেতৃত্বের জন্যও একটি শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।

মনমোহন সিংয়ের জীবনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর নম্রতা ও সংযম। তিনি কখনোই কোনো জনসভায় হট্টগোল বা তর্কের মাধ্যমে নেতা হিসেবে পরিচিত হতে চাননি। বরং, তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তাঁর নিষ্ঠা, যোগ্যতা এবং দক্ষতা তাঁকে দেশের একটি অমূল্য রত্নে পরিণত করেছিল। বিশেষত, ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক সংস্কারের যুগে তিনি যখন ভারতের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, তখন তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে ভারত বিশ্বের অগ্রসর অর্থনৈতিক রাষ্ট্রগুলির মধ্যে স্থান পায়।

তার পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক জীবনে, মনমোহন সিংকে একটা প্রতীক হিসেবে দেখা হত — নির্ভীক এবং যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নেতা। তাঁর নেতৃত্বে, ভারত আন্তর্জাতিক পরিসরে এক নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ভারতের পরমাণু চুক্তি, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আসন লাভ, এবং বেশ কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার তাঁর আমলে বাস্তবায়িত হয়েছিল।

মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে ভারতের রাজনীতি ও জনগণ হারালো একজন মহান নেতা, যিনি সারা বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি উন্নত করতে কাজ করেছেন। তাঁর অবদান চিরকাল মনে রাখা হবে, এবং তিনি দেশের ইতিহাসে একটি অমর স্থান লাভ করবেন।