প্রাক্তন জনতা দল (সেকুলার) সাংসদ এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার নাতি প্রজ্জ্বল রেভান্নাকে(Prajwal Revanna)একটি ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে। বেঙ্গালুরুর এমপি/এমএলএদের জন্য বিশেষ আদালত শুক্রবার (১ আগস্ট) ৩৪ বছর বয়সী প্রজ্জ্বলকে তাঁর পরিবারের গৃহকর্মীর উপর ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে।
শনিবার (২ আগস্ট) আদালত তাঁকে ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৩৭৬(২) ধারার অধীনে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেয়, যা ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করা হবে। বিচারক সন্তোষ গজানন ভাটের নেতৃত্বাধীন এই আদালত মামলাটির বিচার মাত্র ১৪ মাসে সম্পন্ন করে, যা একটি উল্লেখযোগ্য দ্রুততার পরিচয় দেয়।
মামলাটি হাসান জেলার হোলেনারসিপুরায় রেভান্না পরিবারের গান্নিকাড়া ফার্মহাউসে নিযুক্ত ৪৮ বছর বয়সী এক গৃহকর্মীর অভিযোগের উপর ভিত্তি করে। ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, প্রজ্জ্বল ২০২১ সালে তাঁকে দু’বার ধর্ষণ করেন—একবার হাসানের ফার্মহাউসে এবং পরে বেঙ্গালুরুর বাসবনগুড়িতে রেভান্না পরিবারের বাসভবনে।
এই ঘটনাগুলো প্রজ্জ্বল নিজের মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেছিলেন বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগী আরও জানান, প্রজ্জ্বল তাঁকে ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছিলেন। ২০২৪ সালের এপ্রিলে হাসানে লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে এই ভিডিওগুলো পেন-ড্রাইভের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে, যা রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে।
কর্ণাটক পুলিশের বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নেয়। তদন্তে ১১৩ জন সাক্ষীর বয়ান এবং ১৮০টি নথি সহ ১,৬৩২ পৃষ্ঠার একটি বিশাল চার্জশিট দাখিল করা হয়। ভুক্তভোগীর পরিধান করা একটি শাড়িতে প্রজ্জ্বলের ডিএনএ-র উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ায় এটি মামলার মূল প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়।
এছাড়া, ভুক্তভোগীর বয়ান এবং ডিজিটাল প্রমাণ, যেমন প্রজ্জ্বলের রেকর্ড করা ভিডিও, মামলাটিকে আরও শক্তিশালী করে। এসআইটি-র প্রধান তদন্তকারী ইন্সপেক্টর শোভার নেতৃত্বে দলটি ১২৩টি প্রমাণ সংগ্রহ করে।
প্রজ্জ্বলের বিরুদ্ধে আইপিসি-র ৩৭৬(২)(কে) এবং ৩৭৬(২)(এন) ধারার অধীনে ধর্ষণ, ৩৫৪(এ), ৩৫৪(বি), ৩৫৪(সি) ধারায় যৌন হয়রানি ও ভয়েউরিজম, ৫০৬ ধারায় হুমকি এবং ২০১ ধারায় প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া, তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০৮-এর ৬৬(ই) ধারার অধীনে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগও প্রমাণিত হয়। এই ধারাগুলোর মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগে সর্বনিম্ন ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
আদালতে রায় ঘোষণার সময় প্রজ্জ্বল আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে এবং তাঁর দ্রুত রাজনৈতিক উত্থানই এই মামলার কারণ। তিনি বলেন, “আমি একজন মেধাবী ছাত্র ছিলাম, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক। আমার একমাত্র ভুল ছিল রাজনীতিতে দ্রুত উন্নতি।”
তিনি আরও দাবি করেন, ভুক্তভোগী ঘটনার সময় কাউকে কিছু না বললেও নির্বাচনের ঠিক আগে অভিযোগ দায়ের করেন, যা ষড়যন্ত্রের অংশ। তবে প্রসিকিউশন এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, প্রজ্জ্বল একজন “অভ্যাসগত অপরাধী” যিনি একাধিক মহিলার উপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন এবং কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি।
এই মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রজ্জ্বলের প্রাক্তন ড্রাইভার কার্তিক এন (৩৪), যিনি তাঁর ফোনে ২,০০০টিরও বেশি অশ্লীল ছবি এবং ৪০-৫০টি যৌন নির্যাতনের ভিডিও আবিষ্কার করেন। এই প্রমাণগুলো মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রজ্জ্বলের বিরুদ্ধে আরও তিনটি ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রাক্তন জেডিএস জেলা পঞ্চায়েত কর্মী এবং অপরটি রেভান্না পরিবারের একজন গৃহকর্মী ও তাঁর মেয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের হয়েছে।
মোদীকে ক্ষমতাচ্যুত করবেন রাহুল গান্ধী, ভবিষ্যদ্বাণী রেভান্থ রেড্ডির!
এই রায় গোটা দেশে ন্যায়বিচারের একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। প্রসিকিউশনের আইনজীবী বিএন জগদীশ বলেন, “এই রায় সমাজে একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে। ভুক্তভোগী একজন দরিদ্র, অশিক্ষিত মহিলা, যিনি শক্তিশালী অপরাধীর সামনে সাহসের সঙ্গে দাঁড়িয়েছেন।” এই ঘটনা গোদা পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাবের উপরও প্রশ্ন তুলেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে হাসান জেলায় রাজনৈতিক আধিপত্য বজায় রেখেছে।