মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ (Anil Deshmuk) আজ সন্ধ্যায় একটি গুরুতর পাথর হামলায় আহত হয়েছেন। নাগপুর জেলার কাটোল-জলালখেদা রোডে তার গাড়িতে এই হামলা হয়। এনসিপি (শরদচন্দ্র পাওয়ার গোষ্ঠী) নেতা দেশমুখ একটি নির্বাচনী সভা থেকে ফেরার সময় এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার বিবরণ
অনিল দেশমুখ নারখেদ গ্রামে একটি নির্বাচনী সভা শেষ করে টিংখেদা-বিশনুর রোড হয়ে কাটোল ফিরছিলেন। পথে বেলফাটা নামক স্থানে কিছু দুষ্কৃতী তার গাড়ির উপর পাথর নিক্ষেপ করে।
হামলায় তিনি সামনের আসনে বসে থাকার সময় মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এক ভিডিওতে দেখা যায়, তার মাথা থেকে রক্ত পড়ছে এবং তার সাদা কুর্তা রক্তে ভিজে গেছে। তিনি বর্তমানে নাগপুরের আলেক্সিস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হামলায় গাড়ির উইন্ডশিল্ড ও জানালাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জানালার কাচ ভেঙে গাড়ির ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার ছবিগুলি থেকে স্পষ্ট যে হামলাটি পরিকল্পিত ছিল।
পুলিশের প্রতিক্রিয়া
নাগপুর গ্রামীণ পুলিশ সুপার হর্ষ পোদ্দার জানিয়েছেন, “এই হামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।” এই ঘটনার পর কাটোল থানা চত্বরে দেশমুখের সমর্থকদের বিশাল ভিড় জমে যায়। তারা দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা বালাসাহেব থোরাট। তিনি বলেন, “নাগপুর জেলায় প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপর এমন আক্রমণ থেকে বোঝা যায়, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে পড়েছে যে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে।”
নির্বাচনী প্রেক্ষাপট
এই হামলা এমন একটি সময়ে ঘটল যখন মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন। ২০ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হবে এবং ২৩ নভেম্বর গণনা হবে।
অনিল দেশমুখের ছেলে সালিল দেশমুখ কাটোল বিধানসভা আসন থেকে এনসিপি (শরদ পাওয়ার গোষ্ঠী) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার মুখোমুখি রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী চারানসিং ঠাকুর।
হামলার সম্ভাব্য কারণ
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই হামলার পেছনে রাজনৈতিক শত্রুতা থাকতে পারে। নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন ঘটনা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা রয়েছে এবং এই ঘটনা সেই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া
কাটোলের স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তাদের দাবি, নির্বাচনের সময় প্রার্থী ও নেতাদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা উচিত। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, একজন প্রাক্তন মন্ত্রী যদি এমন হামলার শিকার হন, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?
অনিল দেশমুখের উপর হামলার ঘটনা মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এটি শুধু তার দলের জন্য নয়, পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপরও ছায়া ফেলেছে। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে জনগণ এখন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ আশা করছে।