কর্ণাটকের প্রাক্তন ডিজিপি ওম প্রকাশের রহস্যজনক মৃত্যু, রাজ্যে শোকের ছায়া

কর্ণাটকের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (ডিজিপি) ওম প্রকাশের (om prakash) রহস্যজনক মৃত্যু রাজ্যের পুলিশ মহল এবং জনগণের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছে। রবিবার (২০ এপ্রিল)…

om prakash death

কর্ণাটকের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (ডিজিপি) ওম প্রকাশের (om prakash) রহস্যজনক মৃত্যু রাজ্যের পুলিশ মহল এবং জনগণের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছে। রবিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুর এইচএসআর লেআউটের তাঁর তিনতলা বাড়ির নিচতলায় তাঁর রক্তাক্ত দেহ পাওয়া যায়। পিটিআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর শরীরে একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল, যা হত্যার সন্দেহকে তীব্র করেছে।

   

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে তাঁর স্ত্রী পল্লবীকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং তাঁর মেয়ে কৃতিকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যের পুলিশ বাহিনীতে এক অভূতপূর্ব শোক এবং বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

কারা জিতবে ট্রফি? মহারাজের ভবিষ্যদ্বাণী ঘিরে চাঞ্চল্য!

ঘটনার বিবরণ

রবিবার বিকেল ৪:০০ থেকে ৪:৩০ নাগাদ বেঙ্গালুরু পুলিশ কন্ট্রোল রুমে একটি ফোন কল আসে, যেখানে ওম প্রকাশের (om prakash) মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁর দেহ রক্তের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (পূর্ব) বিকাশ কুমার জানিয়েছেন, “একটি ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যু হয়েছে।”

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পল্লবী নিজেই পুলিশকে ফোন করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি একজন প্রাক্তন ডিজিপি-এর স্ত্রীকে ভিডিও কল করে বলেছেন, “আমি দানবটিকে হত্যা করেছি।” এই ঘটনার পর পল্লবী এবং তাঁর মেয়ে কৃতিকে হেফাজতে নেওয়া হয়।

ওম প্রকাশের (om prakash) ছেলে কার্তিকেশ একটি এফআইআর দায়ের করেছেন, যাতে তিনি তাঁর মা এবং বোনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তুলেছেন। কার্তিকেশ জানিয়েছেন, তাঁর মা পল্লবী গত ১২ বছর ধরে সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগছেন এবং চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তিনি আরও দাবি করেছেন, পল্লবী প্রায়ই ভয় প্রকাশ করতেন যে তাঁর স্বামী তাঁকে হত্যা করতে পারেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর বোন কৃতি তাঁর বাবাকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছিলেন, কারণ তিনি হুমকির কারণে তাঁর বোনের বাড়িতে থাকতে শুরু করেছিলেন ।

হত্যার পদ্ধতি

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পল্লবী ওম প্রকাশের (om prakash) মুখে লঙ্কার গুঁড়ো ছুঁড়ে দেন এবং তারপর রান্নাঘরের ছুরি দিয়ে তাঁর পেট, বুক এবং ঘাড়ে ১০-১২ বার আঘাত করেন। হত্যার পর তিনি প্রায় ১০ মিনিট ধরে তাঁর স্বামীর মৃতদেহের পাশে নীরবে বসে ছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ভাঙা বোতল এবং ছুরি উদ্ধার করেছে। দেহটি পোস্টমর্টেমের জন্য সেন্ট জন’স হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করছে, এবং সিসিটিভি ফুটেজ এবং মোবাইল রেকর্ড পরীক্ষা করা হচ্ছে।

প্রেক্ষাপট এবং সম্ভাব্য উদ্দেশ্য

তদন্তে জানা গেছে, ওম প্রকাশ (om prakash) এবং পল্লবীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বৈবাহিক কলহ চলছিল। কর্ণাটকের দান্দেলিতে একটি সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ এই হত্যার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। পল্লবী তাঁর স্বামীর একটি সম্পত্তি তাঁর ভাইবোনদের হস্তান্তরের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছিলেন।

Advertisements

এছাড়া, পল্লবী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন এবং কয়েক মাস আগে এইচএসআর লেআউট থানার বাইরে ধর্নায় বসেছিলেন, যখন তাঁর অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওম প্রকাশ তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছিলেন এবং তাঁর আচরণে হতাশ ছিলেন।

ওম প্রকাশের কর্মজীবন (om prakash)

ওম প্রকাশ, বিহারের চম্পারণ জেলার বাসিন্দা, ১৯৮১ ব্যাচের আইপিএস অফিসার ছিলেন। ভূতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এই অফিসার তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন হরপানাহল্লিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে। তিনি শিবমোগা, উত্তর কন্নড় এবং চিক্কামাগালুরুতে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি লোকায়ুক্ত, ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস এবং ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে (সিআইডি) গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ১ মার্চ, ২০১৫ সালে তিনি কর্ণাটকের ডিজিপি নিযুক্ত হন এবং ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর সততা এবং কঠোর কাজের জন্য তিনি সহকর্মীদের মধ্যে সম্মানিত ছিলেন।

জনগণ এবং পুলিশের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা কর্ণাটকের পুলিশ বাহিনী এবং জনগণের মধ্যে গভীর শোক সৃষ্টি করেছে। কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর বলেছেন, “ওম প্রকাশ একজন দক্ষ অফিসার ছিলেন। তাঁর মৃত্যু আমাদের জন্য বড় ক্ষতি।” সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এই ঘটনাকে “দুঃখজনক” এবং “অকল্পনীয়” বলে বর্ণনা করেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ক্ষমতা, সম্মান সবই ছিল, কিন্তু একজন অপরাধীর হাতে নয়, নিজের স্ত্রীর হাতে তাঁর জীবন শেষ হল।”

তদন্তের অগ্রগতি

পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি, তবে পল্লবী এবং কৃতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বেঙ্গালুরু পুলিশ কমিশনার বি দয়ানন্দ বলেছেন, “এফআইআর নথিভুক্ত করার পর বিস্তারিত তদন্ত শুরু হবে।” পুলিশ সম্পত্তি বিরোধের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে, তবে চূড়ান্ত উদ্দেশ্য নির্ধারণের জন্য পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করছে।

ওম প্রকাশের হত্যা শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং পারিবারিক কলহ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার গভীর প্রভাবের একটি উদাহরণ। এই ঘটনা সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যার পূর্ণ সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে, যাতে এই মর্মান্তিক ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।