মুম্বই, ৮ ডিসেম্বর: ভারতের বিচারব্যবস্থার একজন প্রাক্তন বিচারপতির (Former judge remarks Hinduism)মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে এমন এক মন্তব্য, যা হিন্দুত্ববাদ এবং ধর্মের সংজ্ঞাকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এক সাম্প্রতিক সেমিনারে বলেছেন, “হিন্দুধর্ম কোনো ধর্ম নয়। ব্রাহ্মণরা ‘হিন্দু’ শব্দটি তৈরি করেছে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য।
এটি পারস্য ভাষার একটি শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ অপমানজনক।” এই বিবৃতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে উঠেছে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি এটাকে ‘হিন্দুবিরোধী ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করছে, যখন কংগ্রেস এবং বামপন্থী গোষ্ঠীগুলো এটাকে ‘ঐতিহাসিক সত্যের উন্মোচন’ বলে সমর্থন করছে।
যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘোষণা ডিআরডিও-র, মর্ফিং ফাইটার জেট উইং প্রযুক্তির পরীক্ষা সফল
এই মন্তব্য শুধু ধর্মীয় আলোচনা নয়, বরং ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করছে, যেখানে হিন্দুত্ববাদের নামে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া হচ্ছে।প্রাক্তন বিচারপতি কিন্তু বম্বে হাইকোর্টে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন, এই মন্তব্যটি একটি আইনি সেমিনারে করেছেন। তিনি বলেন, “হিন্দু শব্দটি কোনো ধর্মীয় পরিচয় নয়, বরং একটি ভৌগোলিক এবং সামাজিক লেবেল, যা পারস্য আক্রমণকারীদের দ্বারা সিন্ধু নদীর পূর্বতীর বাসিন্দাদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
পারস্য ভাষায় ‘হিন্দু’ শব্দের অর্থ ‘কালো’ বা ‘নিকৃষ্ট’, যা অপমানজনকভাবে ব্যবহৃত হতো। ব্রাহ্মণরা এই শব্দকে কাজে লাগিয়ে একটা জাতিগত শ্রেণিব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা সকলকে ‘হিন্দু’ বলে একত্রিত করার নামে তাদের আধিপত্য বজায় রেখেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “হিন্দুত্ববাদ আজকের রাজনীতিতে একটা অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু এর মূলে রয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদের জাতিভেদ প্রথা। এটা কোনো ধর্ম নয়, বরং একটা জীবনধারা যা বৈচিত্র্যকে দমন করে।” এই কথাগুলো সেমিনারের ভিডিও ক্লিপে রেকর্ড হয়েছে, যা ইউটিউবে লক্ষাধিক ভিউ পেয়েছে।
এই মন্তব্যের ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে। ইতিহাসবিদরা বলছেন, ‘হিন্দু’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার হয়েছে প্রাচীন পারস্য গ্রন্থ ‘আভেস্তা’-তে, যেখানে সিন্ধু নদীর পূর্বতীর লোকদের ‘হিন্দু’ বলা হয়েছে—যার অর্থ ‘নদীর জল’ বা ভৌগোলিক অঞ্চল। মধ্যযুগে মুসলিম আক্রমণকারীরা এটাকে ধর্মীয় পরিচয় হিসেবে ব্যবহার করেন, যাতে নিজেদের থেকে আলাদা করা যায়। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে এটি একটা সংগঠিত ‘ধর্ম’ হিসেবে প্রচারিত হয়, যা ব্রাহ্মণ্যবাদী গ্রন্থগুলোর সঙ্গে যুক্ত।
সুপ্রিম কোর্টের ১৯৯৫ সালের হিন্দুত্ববাদ মামলায় (ড. প্রভু বনাম প্রভাকর কুন্টে) বিচারপতিরা বলেছেন, “হিন্দুত্ব হিন্দুধর্মের সমার্থক নয়; এটা ভারতীয় সংস্কৃতি এবং জীবনধারার প্রতীক।” তবে প্রাক্তন বিচারপতির মন্তব্যে এই সংজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, বলা হয়েছে যে এটা ব্রাহ্মণদের দ্বারা তৈরি একটা মিথ্যা পরিচয়, যা জাতিভেদকে শক্তিশালী করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাম পুনিয়ানি বলেন, “এই মন্তব্য হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে একটা আঘাত। এটা দেখায় যে, ধর্মের নামে জাতিগত অসমতাকে লুকানো যাবে না।”

