প্রয়াত জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক

জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক দীর্ঘ রোগভোগের পর নয়াদিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন (Satyapal Malik)। তাঁর মৃত্যুর খবরটি তাঁর ব্যক্তিগত সচিব…

Satyapal Malik passes away

জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক দীর্ঘ রোগভোগের পর নয়াদিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন (Satyapal Malik)। তাঁর মৃত্যুর খবরটি তাঁর ব্যক্তিগত সচিব কে এস রানা নিশ্চিত করেছেন। সত্যপাল মালিক ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তাঁর মেয়াদকালে তিনি বিশেষত ২০১৯ সালের পুলওয়ামা জঙ্গি হামলা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন।

   

সত্যপাল মালিক, যিনি একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন। বিশেষ করে, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছিলেন।

তিনি দাবি করেছিলেন যে, এই হামলার পিছনে গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি ছিল। তাঁর এই মন্তব্য তৎকালীন শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছিল। তিনি বিজেপির সমালোচক হিসেবেও পরিচিত হয়ে ওঠেন।মালিকের রাজনৈতিক যাত্রা অত্যন্ত বর্ণাঢ্য ছিল।

তিনি উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিলেন এবং বিজেপির সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের সঙ্গেও কাজ করেছেন। তিনি গোয়া এবং বিহারের রাজ্যপাল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। জম্মু ও কাশ্মীরে তাঁর মেয়াদকালে তিনি রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের (অনুচ্ছেদ ৩৭০) সময়কালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তবে, পরবর্তীকালে তিনি এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন এবং কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে সরব হয়েছিলেন। তাঁর এই অবস্থান তাঁকে রাজনৈতিক মহলে একজন স্পষ্টবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত করেছিল।

জম্মু ও কাশ্মীরে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাজ্যের জটিল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে ভারত সরকার অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে—জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। এই সময়ে মালিক রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এবং তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি রাজ্যের প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

Advertisements

তাঁর মৃত্যুতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিরোধী দলনেতা এবং বিজেপি নেতা সুনীল শর্মা শোক প্রকাশ করে বলেছেন, “সত্যপাল মালিকের মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে প্রায় দেড় বছর রাজ্যপাল ছিলেন। আমি তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগে ছিলাম এবং বিভিন্ন সময়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি।” তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সত্যপাল মালিকের রাজনৈতিক জীবন শুধুমাত্র জম্মু ও কাশ্মীরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে সরব হয়েছেন। তিনি কৃষক আন্দোলনের সময় কৃষকদের পক্ষে কথা বলেছিলেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু নীতির সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর এই স্পষ্টবাদিতা তাঁকে একজন সাহসী নেতা হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিল।

তবে, তাঁর সমালোচনামূলক মন্তব্য কখনও কখনও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।সত্যপাল মালিকের প্রয়াণে ভারতের রাজনৈতিক মহলে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর অবদান এবং স্পষ্টবাদী অবস্থান তাঁকে একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

১০ বছরের লড়াই শেষে ঘরে ফেরা, সমাজের কাছে প্রশ্ন সান্ত্বনার— ‘আমার অপরাধ কী ছিল?’

তাঁর মৃত্যুতে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন অনেকে। তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার এবং তাঁর অবদান ভবিষ্যতেও স্মরণীয় থাকবে।