প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রয়াত, বয়স হয়েছিল ৯২ বছর

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং (Manmohan Singh) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (AIIMS) হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স…

Former PM Manmohan Singh Passes Away: AIIMS Reveals Details of His Final Moments

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং (Manmohan Singh) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (AIIMS) হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। বহুদিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন মনমোহন সিং। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রায় রাত ৮টা নাগাদ তাঁকে AIIMS-এর ইমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করা হয়।

শারীরিক অবস্থার অবনতি
ড. সিং দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সংক্রমণ এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পরে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা, যার মধ্যে তাঁর স্ত্রী গুরশরণ কৌরও ছিলেন, শীঘ্রই হাসপাতালে পৌঁছান। AIIMS কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমস্ত চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

   

কংগ্রেসের শোক
ড. মনমোহন সিং-এর প্রয়াণে কংগ্রেস দল গভীর শোক প্রকাশ করেছে। দিল্লি কংগ্রেস এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, “দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ড. মনমোহন সিং-এর প্রয়াণ ভারতীয় রাজনীতির এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। ওম শান্তি।”

পাঞ্জাব কংগ্রেসের সভাপতি অমরিন্দর সিং রাজা ওয়ারিং বলেন, “ড. মনমোহন সিং-এর প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। একজন প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক এবং অসাধারণ অর্থনীতিবিদ হিসেবে তাঁর অবদান জাতি চিরকাল স্মরণ করবে। তাঁর পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা।”

জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
ড. মনমোহন সিং ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত পাঞ্জাবের গাহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শরণার্থী হিসেবে দেশভাগের পর তাঁর পরিবার ভারতে চলে আসে। নিজের কঠোর পরিশ্রম এবং মেধার দ্বারা তিনি এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছান। ক্যামব্রিজ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।

ভারতের ১৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দুটি পূর্ণ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন মনমোহন সিং। তিনি ভারতের একমাত্র শিখ প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বে ভারত একাধিক ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক সংস্কার অর্জন করে।

প্রধান অর্থনৈতিক অবদান
ড. সিং-এর অর্থনৈতিক নীতির কথা বললে, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময় ভারতের অর্থনীতি চরম সংকটে ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর সহায়তায় তিনি এমন কিছু সংস্কার করেছিলেন যা ভারতীয় অর্থনীতির ভিত্তিকে পুনর্গঠন করেছিল। তাঁর নেওয়া পদক্ষেপগুলির মধ্যে ছিল বেসরকারিকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগের উন্মুক্তিকরণ এবং রুপির মুদ্রামান কমানো।

এছাড়াও তিনি রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়কাল
২০০৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেন। তাঁর আমলে ভারতীয় অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরে তাঁর প্রশাসন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, তবুও তাঁর নেতৃত্ব সর্বদা শান্ত এবং দৃঢ় ছিল।

ব্যক্তিগত জীবন ও সম্মাননা
মনমোহন সিং তাঁর স্ত্রী গুরশরণ কৌরের সঙ্গে দীর্ঘ ৬০ বছরের দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন। তাঁদের তিন কন্যা। তাঁর অবদানের জন্য তিনি পদ্মবিভূষণ সহ একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

প্রতিক্রিয়া
ড. সিং-এর মৃত্যুতে শুধু কংগ্রেস নয়, বিজেপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির নেতারাও শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা AIIMS-এ গিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর অবদান
ড. মনমোহন সিং ছিলেন একজন নিরহঙ্কারী এবং দূরদর্শী নেতা। ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে তাঁর নাম অমর হয়ে থাকবে। তাঁর নেতৃত্বে ভারত বৈশ্বিক মঞ্চে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছিল।

AIIMS সূত্রে খবর, ড. মনমোহন সিং-এর মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাঁর বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। ড. সিং-এর মৃত্যুতে দেশ এক মহান ব্যক্তিত্বকে হারাল। তাঁর অবদান এবং ত্যাগ ভারত চিরকাল স্মরণ করবে।