ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) এবং বিজেপি নেতা চম্পাই সোরেনকে রাঁচির নাগড়ি এলাকায় প্রস্তাবিত রিমস-২ (রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস) হাসপাতাল প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আগে গৃহবন্দি করা হয়েছে।
এই ঘটনায় রাঁচি শহরের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি) কে ভি রামন জানিয়েছেন, “আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছে এবং তিনি আপাতত বাড়িতেই থাকবেন। তাঁকে এই বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্যও বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এই পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।”
চম্পাই সোরেন রবিবার, ২৪ আগস্ট, নাগড়ি এলাকায় আদিবাসী কৃষকদের সঙ্গে ‘হাল জোতো, রোপা রোপো’ (হল চষা, চারা রোপণ) আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি দাবি করেছেন যে, ১০০০ কোটি টাকার এই হাসপাতাল প্রকল্পের জন্য নাগড়ি এলাকায় আদিবাসীদের জমি জোরপূর্বক অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
তার অভিযোগ জমির মালিকদের কোনও নোটিশ বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, এই অধিগ্রহণে ২০১৩ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন, ছোটনাগপুর টেনান্সি (সিএনটি) আইন এবং গ্রাম সভার সম্মতির বিধান উপেক্ষা করা হয়েছে।
রাঁচি জেলা প্রশাসন এই প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে নাগড়ি এলাকায় প্রস্তাবিত রিমস-২ প্রকল্পের ২০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই আদেশে পাঁচ বা তার বেশি ব্যক্তির একত্রিত হওয়া, জনসভা, লাউডস্পিকার ব্যবহার এবং অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং প্রতিবাদস্থলে যাওয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড স্থাপন করা হয়েছে। চম্পাই সোরেনের পুত্র বাবুলাল সোরেন এবং তাঁর সমর্থকদেরও পুলিশ আটক করেছে।
চম্পাই সোরেন এই গৃহবন্দি হওয়ার ঘটনাকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলেছেন, “নাগড়ির আদিবাসী-মূলবাসী কৃষকদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার জন্য ঝাড়খণ্ড সরকার আমাকে গৃহবন্দি করেছে। এটি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আঘাত।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে, তিনি আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার জন্য এই প্রতিবাদে অংশ নিতে চেয়েছিলেন।
এই প্রতিবাদের পেছনে রয়েছে রিমস-২ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসী কৃষকদের দীর্ঘদিনের অসন্তোষ। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের জন্য কাঙ্কের সুকুরহুটু এলাকায় ১০২ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল, কিন্তু বিতর্কের পর তা নাগড়িতে স্থানান্তরিত হয়।
নাগড়ির কৃষকরা দাবি করেছেন যে তাঁদের জমিতে বেড়া দেওয়া হয়েছে, যার ফলে তাঁরা চাষবাস করতে পারছেন না। নাগড়ি জমিন বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতি এই প্রতিবাদে অন্যান্য গ্রামের কৃষকদেরও অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এই ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। বিজেপির ভারপ্রাপ্ত রাজ্য সভাপতি রবীন্দ্র কুমার রাই অভিযোগ করেছেন যে, সরকার জোর করে জমি অধিগ্রহণ করছে এবং কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা না করে এই প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রাকেশ সিনহা এই প্রতিবাদকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলে সমালোচনা করেছেন এবং জানিয়েছেন যে এই জমি উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত হবে।
চম্পাই সোরেন আরও অভিযোগ করেছেন যে, ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীদের উপর আক্রমণ চলছে। তিনি বলেন, “আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এবং যাঁরা তাঁদের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন, তাঁদের হয় হত্যা করা হচ্ছে অথবা নানাভাবে নিপীড়ন করা হচ্ছে।” তিনি আদিবাসী নেতা সূর্য হাঁসদার গ্রেফতারি এবং মৃত্যুর উল্লেখ করে বলেন, এই ঘটনা আদিবাসীদের প্রতি সরকারের দমননীতির প্রমাণ।
চাকরি নয়, পেল ফাঁস হওয়া তথ্য! ক্ষুব্ধ TET পরীক্ষার্থীরা
এই গৃহবন্দি এবং প্রতিবাদের ঘটনা ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রিমস-২ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার এই লড়াইয়ে চম্পাই সোরেনের অংশগ্রহণ এই ইস্যুটিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। আগামী দিনে এই আন্দোলন কোন দিকে যায়, তা ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।