জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি এনসিপি (এসপি)-র সভাপতি শরদ পাওয়ার রবিবার তরুণদের উদ্দেশে বলেছেন, (Agriculture Minister) কৃষির উপর নির্ভর না করে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পরিকাঠামোগত উন্নয়নের এই যুগে কৃষিজমির পরিমাণ ক্রমশ কমছে, তাই শিল্পায়নই ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করবে।
পুণেতে একটি শিল্প সম্মেলনে বক্তৃতার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন, যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।শরদ পাওয়ার, যিনি ভারতের কৃষিমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি বলেন, “কৃষি আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু আধুনিক ভারতের প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র কৃষির উপর নির্ভর করা সম্ভব নয়।
জমির পরিমাণ কমছে, জনসংখ্যা বাড়ছে এবং অবকাঠামোগত প্রকল্প যেমন হাইওয়ে, রেলওয়ে এবং বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তরুণদের উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে হবে। শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্য, যেখানে কৃষির পাশাপাশি শিল্পায়নের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে তরুণদের উচিত নতুন প্রযুক্তি, স্টার্টআপ এবং উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করা। তিনি উদাহরণ হিসেবে পুণে ও মুম্বাইয়ের সফল শিল্প কেন্দ্রগুলির কথা উল্লেখ করেন, যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি, অটোমোবাইল এবং ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প বিকশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের তরুণরা শিক্ষিত এবং দক্ষ। তারা যদি কৃষির বাইরে শিল্প ও ব্যবসায় মনোনিবেশ করে, তবে ভারত বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির মধ্যে একটি হয়ে উঠতে পারে।”শরদ পাওয়ারের এই মন্তব্য ভারতের অর্থনৈতিক নীতি এবং কৃষি নির্ভরতার বিষয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি জানান, ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল, কিন্তু কৃষি খাত জিডিপি-তে মাত্র ১৫ শতাংশ অবদান রাখে।
এই বৈষম্য কমাতে শিল্পায়ন এবং পরিষেবা খাতের উন্নয়ন অপরিহার্য। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও সহজ ঋণ, কর ছাড় এবং পরিকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করা হোক।মহারাষ্ট্রে কৃষিজমি হ্রাসের বিষয়টি উল্লেখ করে পাওয়ার বলেন, গত দুই দশকে রাজ্যে প্রায় ১২ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমি শিল্প ও পরিকাঠামোগত প্রকল্পের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে কৃষি নির্ভর অর্থনীতি টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। তিনি তরুণদের কৃষি-সংশ্লিষ্ট ব্যবসা, যেমন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি-প্রযুক্তি এবং জৈব কৃষি পণ্যের উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “কৃষি ছাড়া আমরা চলতে পারি না, কিন্তু কৃষির আধুনিকীকরণ এবং শিল্পের সঙ্গে এর সমন্বয় প্রয়োজন।”
পাওয়ারের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিজেপি নেতা এবং মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস বলেন, “শরদ পাওয়ারের বক্তব্যে সত্যতা আছে। আমাদের সরকার ইতিমধ্যেই মেক ইন ইন্ডিয়া এবং স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে শিল্পায়নকে উৎসাহিত করছে।” তবে, কংগ্রেস নেতা বালাসাহেব থোরাট পাওয়ারের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “কৃষি ভারতের প্রাণ।
শিল্পায়ন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কৃষকদের উপেক্ষা করা যায় না। পাওয়ারের উচিত কৃষকদের জন্য আরও জোরালো কণ্ঠে কথা বলা।”সিপিআই(এম) নেতা অশোক ধাওয়ালে বলেন, “শরদ পাওয়ারের বক্তব্য বড় শিল্পপতিদের স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা। কৃষিজমি অধিগ্রহণের নামে কৃষকদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তরুণদের জন্য শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে কৃষকদের জমি রক্ষা করতে হবে।”
তিনি আরও দাবি করেন, কৃষি ও শিল্পের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।শরদ পাওয়ারের এই আহ্বান তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। পুণের একজন তরুণ উদ্যোক্তা রাহুল পাটিল বলেন, “আমরা শিল্পে বিনিয়োগ করতে চাই, কিন্তু সরকারের কাছ থেকে আরও সহায়তা প্রয়োজন।
পাওয়ার সাহেবের বক্তব্য আমাদের উৎসাহিত করেছে।” তবে, কৃষক সংগঠনগুলি এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলছে, কৃষি ছাড়া ভারতের অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে।শরদ পাওয়ারের এই বক্তব্য মহারাষ্ট্রের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে।
কখন শহরে আসছে ইস্টবেঙ্গলের ওমেন্স টিম? জানুন
তাঁর দল এনসিপি (এসপি) মহাবিকাশ আঘাড়ি জোটের অংশ হিসেবে কৃষি ও শিল্পের ভারসাম্য রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, এই বক্তব্য কীভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করে এবং তরুণদের শিল্পায়নের দিকে উৎসাহিত করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।