পয়লা নভেম্বর ৮ রাজ্য ও ৫ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করল

আজ, ১ নভেম্বর, আটটি রাজ্য এবং পাঁচটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তাদের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন (Formation Day Celebrations) করছে। এই রাজ্যগুলি হলো অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, কর্ণাটক, কেরালা,…

Formation Day Celebrations: 8 Indian States and 5 Union Territories Mark November 1

আজ, ১ নভেম্বর, আটটি রাজ্য এবং পাঁচটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তাদের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন (Formation Day Celebrations) করছে। এই রাজ্যগুলি হলো অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, কর্ণাটক, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব এবং তামিলনাড়ু। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, চণ্ডীগড়, দিল্লি, লক্ষদ্বীপ ও পুদুচেরি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটারে এ দিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন।

প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এই দিনটি কেবল ঐতিহ্যবাহী স্মরণ নয়, বরং প্রতিটি অঞ্চলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য উদযাপনের এক অনন্য সুযোগ।

   

অন্ধ্রপ্রদেশ: ভারতের প্রথম ভাষাভিত্তিক রাজ্য
অন্ধ্রপ্রদেশ ভারতের প্রথম রাজ্য, যা ভাষার ভিত্তিতে গঠিত হয়। ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী হায়দরাবাদ রাজ্য ভেঙে আলাদা করে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয়। এই রাজ্য তেলেগু ভাষাভাষীদের জন্য আলাদা করে গঠিত হওয়ায় ভারতের রাজ্য গঠনের ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

কর্ণাটক: রাজ্য পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে “রাজ্যোৎসব দিবস”
কর্ণাটক রাজ্যটি পূর্বে মাইসোর নামে পরিচিত ছিল। ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর এটি ভাষার ভিত্তিতে পুনর্গঠিত হয় এবং কান্নড় ভাষাভাষীদের অঞ্চলগুলিকে একত্র করে কর্ণাটক নামে এই রাজ্য গঠিত হয়। কর্ণাটক আজ “রাজ্যোৎসব দিবস” হিসেবে উদযাপন করছে। এই উপলক্ষে রাজ্যজুড়ে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পতাকা উত্তোলন, সঙ্গীত এবং শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

কেরালা: মালাবার, কোচিন ও ত্রাভাঙ্কোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত
কেরালা রাজ্যটিও ১ নভেম্বর, ১৯৫৬ সালে পুনর্গঠনের মাধ্যমে গঠিত হয়, যখন মালাবার, কোচিন এবং ত্রাভাঙ্কোর অঞ্চলগুলিকে একত্রিত করা হয়। কেরালা তার অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উচ্চ সাক্ষরতার হার এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য সুপরিচিত। প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কেরালায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যের স্মরণে নানা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।

মধ্যপ্রদেশ: ভারতের কেন্দ্রস্থলে গঠিত রাজ্য
ভারতের কেন্দ্রে অবস্থিত মধ্যপ্রদেশ ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পুনর্গঠিত হয়। এই দিনটি “মধ্যপ্রদেশ ফাউন্ডেশন ডে” নামে উদযাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে রঙিন শোভাযাত্রা, ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনা এবং স্থানীয় কৃতিত্বকে সম্মান জানানোর জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ছত্তিশগড়: ভারতের “ধানের বাটি”
ছত্তিশগড় ভারতের ২৬তম রাজ্য হিসেবে ২০০০ সালের ১ নভেম্বর গঠিত হয়। ভারতের ধানের প্রধান উৎপাদনকারী রাজ্য হওয়ায় ছত্তিশগড়কে “ভারতের ধানের বাটি” বলা হয়। এই রাজ্যটির অর্থনীতি প্রধানত কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং বিশেষত ধান উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয়। প্রতিষ্ঠা দিবসে ছত্তিশগড়ে নানা ধরনের উৎসব ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজ্যের অগ্রগতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

হরিয়ানা: পাঞ্জাব থেকে আলাদা করে গঠিত
১৯৬৬ সালের ১ নভেম্বর ভাষার ভিত্তিতে পাঞ্জাব থেকে আলাদা করে হরিয়ানা গঠিত হয়। রাজ্যটি তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, কৃষিক্ষেত্র এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পরিচিত। হরিয়ানার প্রতিষ্ঠা দিবসে রাজ্যজুড়ে জনসাধারণের অংশগ্রহণে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী এবং ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যা এই রাজ্যের অনন্য পরিচয় ও সাফল্য উদযাপন করে।

পাঞ্জাব: পাঞ্জাবি ভাষাভাষীদের জন্য আলাদা রাজ্য
১৯৬৬ সালের ১ নভেম্বর হরিয়ানা আলাদা হওয়ার পর, পাঞ্জাব রাজ্যটিও পুনর্গঠিত হয় এবং পাঞ্জাবি ভাষাভাষীদের জন্য আলাদা করে এই রাজ্য গঠন করা হয়। পাঞ্জাব তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং সাহসিকতার জন্য বিখ্যাত। প্রতিষ্ঠা দিবসে পাঞ্জাব রাজ্যের ঐতিহ্য ও সাফল্য উদযাপন করতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, চণ্ডীগড়, দিল্লি, লক্ষদ্বীপ এবং পুদুচেরি তাদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এই দিনগুলোতে বিভিন্ন অঞ্চল তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিচয়কে সম্মান জানায় এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে গর্ব ও ঐক্যের অনুভূতি জাগায়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির অবদানের কথা উল্লেখ করে তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জাতির উন্নয়ন ও গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।”

প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনের প্রাসঙ্গিকতা
ভারতের প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিচয় রয়েছে। প্রতিষ্ঠা দিবসগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চল তাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মর্যাদা রক্ষা ও উদযাপন করে। দেশজুড়ে এই ধরনের উদযাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নের কথা উঠে আসে এবং তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়।