আসিয়ানের ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উষ্ণ শুভেচ্ছা বিদেশ মন্ত্রীর

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (ASEAN) দেশগুলির সংগঠন আসিয়ানের (Association of Southeast Asian Nations) ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে…

ASEAN 58th anniversary

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (ASEAN) দেশগুলির সংগঠন আসিয়ানের (Association of Southeast Asian Nations) ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত ও আসিয়ানের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং জনগণের মধ্যে সংযোগ রয়েছে, যা উভয় পক্ষের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে।

এই উপলক্ষে ভারত পুনরায় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে যে, উভয় পক্ষের জনগণের কল্যাণে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করা হবে। এই শুভেচ্ছা বার্তা আসিয়ানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের গভীরতা এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে।ভারত-

   

আসিয়ান সম্পর্কের ঐতিহাসিক পটভূমি

১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত আসিয়ান বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশ—ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্রুনাই, ভিয়েতনাম, লাওস, মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়া—নিয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক সংগঠন। ভারত ১৯৯২ সালে আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং ২০২২ সালে এই সম্পর্ক ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়।

ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি এবং আসিয়ানের কেন্দ্রীয় ভূমিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই অংশীদারিত্ব অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ

ভারত ও আসিয়ানের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যা ভারতের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। আসিয়ান ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, এবং ভারত আসিয়ানের শীর্ষ দশটি বাণিজ্য অংশীদারের মধ্যে রয়েছে।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (আরসিইপি)-এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। এছাড়া, ভারত ও আসিয়ানের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও জনগণের মধ্যে সংযোগও গভীর।

বৌদ্ধ ও হিন্দু ঐতিহ্য, ভাষা, এবং শিল্পকলার মাধ্যমে উভয় অঞ্চলের মধ্যে ঐতিহাসিক সংযোগ রয়েছে। ভারতের ‘আসিয়ান-ইন্ডিয়া মিউজিক ফেস্টিভ্যাল’ এবং ‘আসিয়ান-ইন্ডিয়া ইয়ুথ সামিট’-এর মতো উদ্যোগ এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে।

ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের লক্ষ্য

ভারত তার আসিয়ান অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করতে বদ্ধপরিকর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে উভয় পক্ষের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে সংযোগ বৃদ্ধি, সমুদ্র নিরাপত্তা, ডিজিটাল অর্থনীতি, এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহযোগিতা।

Advertisements

ভারত-আসিয়ান সংযোগ বাড়াতে ত্রিপুরা থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত সড়ক প্রকল্প এবং ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় মহাসড়কের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মুক্ত ও নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে ভারত ও আসিয়ান যৌথভাবে কাজ করছে।

পরিবেশ ও ডিজিটাল সহযোগিতা

আসিয়ানের ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভারত জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে সহযোগিতার উপর জোর দিয়েছে। ভারতের ‘লাইফ’ (লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট) উদ্যোগ এবং আসিয়ানের সবুজ উন্নয়ন নীতির মধ্যে সামঞ্জস্য রয়েছে।

এছাড়া, ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম ইউপিআই আসিয়ান দেশগুলিতে প্রচলনের জন্য আলোচনা চলছে, যা আর্থিক সংযোগ বাড়াবে। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত আসিয়ানের তরুণদের জন্য স্কলারশিপ এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রদান করছে।

ভোট চুরি বিতর্ক! নির্বাচন কমিশনকে রাজধর্ম পালনের কড়া বার্তা সিপিএমের

রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা

ভারত ও আসিয়ানের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে মুক্ত নৌচলাচল এবং আঞ্চলিক শান্তি নিশ্চিত করতে উভয় পক্ষ যৌথভাবে কাজ করছে। ভারতের নৌবাহিনী আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে নিয়মিত যৌথ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। এছাড়া, সাইবার নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারত-আসিয়ান সহযোগিতা আরও জোরদার হয়েছে।

আসিয়ানের ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ভারত-আসিয়ান সম্পর্কের গভীরতা এবং সম্ভাবনাকে পুনরায় তুলে ধরেছে। ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি এবং আসিয়ানের সঙ্গে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব উভয় পক্ষের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

ভারতের প্রতিশ্রুতি এই অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার মাধ্যমে উভয় অঞ্চলের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করবে। এই সহযোগিতা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।