নিউজ ডেস্ক: গত কয়েক বছরে ভারত ছেড়ে গিয়েছেন একাধিক বিদেশি সাংবাদিক। তা নিয়ে যথেষ্ট গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল আন্তর্জাতিকস্তরে। কিন্তু এবার ফের ক্ষমতায় আসতেই স্বমহিমায় মোদি সরকার। গত চার মাসে দু-জন বিদেশি সাংবাদিককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করল ভারত সরকার। সম্প্রতি ইউরোপীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের দেশে থেকে কাজ করার অনুমতি প্রত্যাহার করে নিল অমিত শাহের দফতর।
বিখ্যাত ফরাসি সাংবাদিক সেবাস্তিয়া ফাঁর্সি নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, “দীর্ঘ ১৩ বছর ভারতে সাংবাদিকতা করেছি। কিন্তু এরকম পরিস্থিতির সন্মুখীন হতে হয়নি কখনও। কাজ করার অনুমতি না পাওয়ায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছি।” ইউরোপের বিভিন্ন রেডিও চ্যানেলের দক্ষিণ এশিয়া শাখার প্রধান সেবাস্তিয়ান গত ৭ মার্চ দেশ ছাড়ার নির্দেশ পান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে। ফলে পেশাগত আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়তে তাঁকে। বারবার অনুরোধ করেও সেই সমস্যার কোনও সুরাহা পান নি তিনি। এমনকি মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কি কারণ তাও জানানো হয়নি তাঁকে।
তাঁর আগে আরও এক ফরাসি সাংবাদিক ভানেসা দুনেক গত ফেব্রুয়ারিতে দেশ ছাড়ার নির্দেশ পান। তিনিও সেবাস্তিয়ানের মতো বিগত ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতে ছিলেন। এদেশেই তাঁর শিক্ষালাভ এবং চাকরি। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমল থেকেই তিনি এদেশে রয়েছন। কিন্তু আচমকা তাঁকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিতেই বিস্মিত হয়ে যান তিনি। কারণ জানতে চেয়েও কেন্দ্রের তরফে কোনও সদুত্তর পাননি। শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়েই ১৬ ফেব্রুয়ারি ভারত ছাড়তে বাধ্য হন। আবার গত এপ্রিলে ভোট চলাকালীন কোপের মুখে পড়েন ভারতীয় বংশ্দ্ভুত অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক অবনী ডায়াস। আচমকা ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ পেয়ে তিনিও বিপাকে পড়েন। তবে এই ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ভিসার মেয়াদ অনুযায়ী বিদেশিদের ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে কি কারণে ভিসা বাতিল করা হয়েছে, বিদেশিদের কাছে তার কোনও জবাব দিতে বাধ্য নয় সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এই তুঘলঘি পদক্ষেপে বিপাকে পড়েছে বিদেশমন্ত্রক। তাই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘মুখ শুকিয়ে’ সাফাই গাইতে হচ্ছে জয়শঙ্করকে। যারফলে ভারতের ভাবমূর্তিও ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। ফ্রান্স ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দেশ। ভারতের যে কোনও আন্তর্জাতিক অবস্থানে প্যারিসকে পাশে পেয়েছে নয়াদিল্লি। এমনকি অস্ট্রেলিয়াকেও। কিন্তু এখন ওই দুই সহযোগী দেশের সাংবাদিকদের ওপর এমন আচরনে তাঁরা কতদিন চুপ করে থাকে সেটাই দেখার। বছর দু-য়েক আগে বিদেশি সাংবাদিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইন প্রনয়ণ করে রাশিয়া। তারপর বহু বিদেশি সাংবাদিককে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে হাজতে যেতে হয়, আবার অনেকেই বাধ্য হয় রাশিয়া ছাড়তে। এবার ভারতের এই পদক্ষেপ কিন্তু চিন্তা বাড়াচ্ছে পশ্চিমী দেশগুলির।