বাংলার পদচিহ্নে এবার ইডি হানা স্ট্যালিনের মন্ত্রিসভায়

বাংলার দুর্নীতির ছায়া এখন তামিলনাডুতেও। তামিলনাড়ুর পৌর প্রশাসন, নগর ও জল সরবরাহ মন্ত্রী কে এন নেহরু এবং তাঁর পুত্র, লোকসভা সাংসদ অরুণ নেহরুর সঙ্গে যুক্ত…

ed raid in tamilnadu

বাংলার দুর্নীতির ছায়া এখন তামিলনাডুতেও। তামিলনাড়ুর পৌর প্রশাসন, নগর ও জল সরবরাহ মন্ত্রী কে এন নেহরু এবং তাঁর পুত্র, লোকসভা সাংসদ অরুণ নেহরুর সঙ্গে যুক্ত একাধিক স্থানে সম্প্রতি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ed) তল্লাশি চালিয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই তল্লাশি ২২ কোটি টাকার একটি ব্যাঙ্ক জালিয়াতি মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত।

   

এই মামলাটি ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রুডম ইপিসি লিমিটেড নামে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, মন্ত্রী নেহরুর ভাই এন রবিচন্দ্রন এই ট্রুডম ইপিসি লিমিটেডের একজন পরিচালক।

এই ঘটনার কয়েকদিন আগে, শুক্রবার চেন্নাইয়ে এ এম গোপালনের মালিকানাধীন চিট ফান্ড সংস্থা শ্রী গোকুলম চিটস-এর বিরুদ্ধেও ইডি তল্লাশি চালায়। এ এম গোপালন, যিনি গোকুলম গোপালন নামেও পরিচিত, মালয়ালম চলচ্চিত্র “এম্পুরান”-এর অন্যতম প্রযোজক। এই চলচ্চিত্রটি মুক্তির সময় বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছিল, কারণ এতে গুজরাত দাঙ্গা এবং ডানপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলির ভূমিকা নিয়ে একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছিল।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে “এম্পুরান”-এর পরিচালক ও অভিনেতা পৃথ্বীরাজ সুকুমারনও আয়কর বিভাগের কাছ থেকে একটি নোটিশ পেয়েছেন। তাঁকে ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তিনটি চলচ্চিত্র— “জন গণ মন”, “গোল্ড” এবং “কড়ুয়া”-র আয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। তিনি ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই নোটিশের জবাব দেওয়ার সময় পেয়েছেন।

তল্লাশির (ed) বিস্তারিত

ইডি-র (ed) এই তল্লাশি অভিযান সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫ সকাল থেকে শুরু হয়েছে। তামিলনাড়ুর তিরুচি শহরের থিল্লাই নগরে মন্ত্রী কে এন নেহরুর বাড়ি ছাড়াও তাঁর পুত্র অরুণ নেহরু, ভাই রবিচন্দ্রন, রামলিঙ্গম এবং মণিবন্ননের বাড়িতে তল্লাশি চলছে।

এছাড়াও, চেন্নাই, কোয়েম্বাটুর এবং তিরুচিতে ট্রু ভ্যালু হোমস (টিভিএইচ) নামে একটি নির্মাণ সংস্থার অফিসেও তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। সূত্রের খবর, টিভিএইচ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কে এন রবিচন্দ্রন, যিনি মন্ত্রী নেহরুর ভাই। এই তল্লাশির মূল উদ্দেশ্য হলো ট্রুডম ইপিসি লিমিটেডের সঙ্গে জড়িত আর্থিক অনিয়ম এবং ব্যাঙ্ক জালিয়াতির তদন্ত।

ইডি-র (ed) তরফে জানানো হয়েছে যে, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ট্রুডম ইপিসি লিমিটেড ২২ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা ব্যাঙ্কের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই ঘটনায় মন্ত্রী নেহরুর পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে, এখনও পর্যন্ত ইডি বা মন্ত্রী নেহরুর তরফে এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

গোকুলম গোপালনের ঘটনার সঙ্গে সাদৃশ্য

এই তল্লাশি অভিযানের কয়েকদিন আগে চেন্নাইয়ে শ্রী গোকুলম চিটস নামে একটি চিট ফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে ইডি তল্লাশি চালায়। এই সংস্থার মালিক এ এম গোপালন, যিনি “এম্পুরান” চলচ্চিত্রের প্রযোজক হিসেবে পরিচিত। তল্লাশির সময় ১.৫ কোটি টাকা নগদ এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করা হয়।

ইডি-র দাবি, এই সংস্থা প্রবাসী ভারতীয়দের কাছ থেকে ৫৯২.৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নিয়ম লঙ্ঘন করে। এই ঘটনা ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট (ফেমা)-র অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে।

Advertisements

গোপালনের সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা অনুমোদন ছাড়াই প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে এবং এর মধ্যে ৩৭১.৮০ কোটি টাকা নগদে এবং বাকি চেকের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই অর্থের একটি অংশ “এম্পুরান” চলচ্চিত্রের প্রযোজনায় ব্যবহৃত হয়েছে কিনা, তাও তদন্তের আওতায় রয়েছে।

এই ঘটনার পর পৃথ্বীরাজ সুকুমারনকে আয়কর বিভাগের নোটিশ দেওয়া হয়, যিনি “এম্পুরান”-এর পরিচালক এবং অভিনেতা। তাঁর ২০২২ সালের তিনটি চলচ্চিত্রের আয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে।

রোহিত ও বুমরাহর প্রত্যাবর্তন? আরসিবির বিরুদ্ধে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সম্ভাব্য একাদশ

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

কে এন নেহরু তামিলনাড়ুর শাসক দল দ্রাবিড় মুন্নেত্র কাজগম (ডিএমকে)-এর একজন প্রভাবশালী নেতা। তাঁর পুত্র অরুণ নেহরুও লোকসভার সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই তল্লাশি অভিযান রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দলগুলি এই ঘটনাকে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার সুযোগ হিসেবে দেখছে, যেখানে ডিএমকে এখনও এই বিষয়ে নীরব রয়েছে।

অন্যদিকে, “এম্পুরান” চলচ্চিত্রের বিতর্ক এবং এর প্রযোজক গোপালনের সঙ্গে জড়িত ইডি-র তদন্তও দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর থেকেই ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলির সমালোচনার মুখে পড়েছিল। গুজরাত দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে বিতর্কের পর, মোহনলাল এবং পৃথ্বীরাজ উভয়েই ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং বিতর্কিত অংশ সরিয়ে ফেলার কথা জানিয়েছিলেন।

তদন্তের ভবিষ্যৎ

ইডি-র তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। কে এন নেহরু এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে জড়িত আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। একইভাবে, গোকুলম গোপালনের সংস্থার বিরুদ্ধে ফেমা লঙ্ঘনের অভিযোগে জব্দ নথিগুলির বিশ্লেষণে আরও সময় লাগবে বলে ইডি জানিয়েছে। এই দুটি ঘটনাই দক্ষিণ ভারতের রাজনীতি এবং চলচ্চিত্র জগতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, জনগণ এবং গণমাধ্যম উভয়ই তদন্তের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এই ঘটনাগুলি কীভাবে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। তবে, এটি স্পষ্ট যে, এই তল্লাশি অভিযানগুলি আগামী দিনে আরও আলোচনার জন্ম দেবে।