নজরে ডিলিমিটেশন, স্ট্যালিনের নেতৃত্বে একজোট দক্ষিণ ভারত নেই তৃণমূল

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্ট্যালিন আজ, শনিবার (২২ মার্চ ২০২৫), চেন্নাইয়ে ডিলিমিটেশন (Delimitation) বা লোকসভা আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির (জেএসি) প্রথম বৈঠকের আয়োজন করেছেন।…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/TMC.jpg

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্ট্যালিন আজ, শনিবার (২২ মার্চ ২০২৫), চেন্নাইয়ে ডিলিমিটেশন (Delimitation) বা লোকসভা আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির (জেএসি) প্রথম বৈঠকের আয়োজন করেছেন। এই বৈঠকে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভান্থ রেড্ডি, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান এবং কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমার অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া, শিরোমণি আকালি দলের কার্যকরী সভাপতি বালবিন্দর সিং ভুন্দর এবং ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের (কেরল) সাধারণ সম্পাদক পি.এম.এ. সালাম-সহ বেশ কয়েকজন নেতা এই বৈঠকে যোগ দিতে চেন্নাই পৌঁছেছেন।

এই বৈঠককে “ঐতিহাসিক মুহূর্ত” হিসেবে অভিহিত করে স্ট্যালিন বলেছেন, আসন্ন ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়ার ফলে যদি তামিলনাড়ু এবং অন্যান্য রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব কমে যায়, তবে তা ভারতের সংঘবদ্ধতার ভিত্তিকেই আঘাত করবে। এর আগে এই মাসের শুরুতে, স্ট্যালিন একটি সর্বদলীয় বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছিলেন, যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে তামিলনাড়ুর বর্তমান ৭.১৮ শতাংশ লোকসভা আসন কোনো অবস্থাতেই কমানো যাবে না। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ১৯৭১ সালের জনসংখ্যার ভিত্তিতে ২০২৬ সাল থেকে ৩০ বছরের জন্য লোকসভা আসনের ডিলিমিটেশন করা উচিত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এ বিষয়ে সংসদে আশ্বাস দেওয়া উচিত। জেএসি এই দাবিগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করবে।

   

আরো পড়ুন এনকাউন্টারে মৃত্যু গনধর্ষন মামলার মূল অভিযুক্তর

Advertisements

বৈঠকের পটভূমি ও উদ্দেশ্য
ডিলিমিটেশন বা লোকসভা আসনের পুনর্বিন্যাস নিয়ে দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে এই বৈঠক আয়োজিত হচ্ছে। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, ২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে ডিলিমিটেশন ২০২৬ সাল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছিল। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস হলে উত্তর ভারতের জনবহুল রাজ্যগুলোর আসন বাড়বে এবং দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব কমে যাবে। তামিলনাড়ু, কেরল, তেলঙ্গানা ও কর্নাটকের মতো রাজ্যগুলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফল হওয়া সত্ত্বেও এই প্রক্রিয়ায় “শাস্তি” পেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

স্ট্যালিন এই প্রসঙ্গে বলেন, “যে রাজ্যগুলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রেখেছে, তাদের প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে এই প্রক্রিয়া সংঘবদ্ধতার মূল ভিত্তিকে ধ্বংস করবে। এটি গণতন্ত্রের সারমর্মকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।” তিনি এই বৈঠককে একটি আন্দোলনের সূচনা হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, “এটি কেবল একটি বৈঠক নয়, এটি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ গঠন করবে।”
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতারা

এই বৈঠকে অংশ নিতে শুক্রবার থেকেই বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা চেন্নাই পৌঁছতে শুরু করেছেন। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল পরিষেবা মন্ত্রী পালানিভেল থিয়াগা রাজন এবং ডিএমকে সাংসদ তামিঝাচি থাঙ্গাপান্ডিয়ান বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভান্থ রেড্ডিকে তামিলনাড়ুর পৌর প্রশাসন মন্ত্রী কে.এন. নেহরু এবং ডিএমকে সাংসদ এ. রাজা অভ্যর্থনা জানান। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানকে আইনমন্ত্রী এস. রেগুপতি এবং সাংসদ কনিমোঝি অভ্যর্থনা জানান। কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমার শনিবার সকালে চেন্নাই পৌঁছবেন। এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস এবং ওড়িশার বিজু জনতা দলের প্রতিনিধিরাও এই বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

ডিলিমিটেশনের প্রভাব ও দাবি
তামিলনাড়ু বর্তমানে লোকসভায় ৩৯টি আসন নিয়ে মোট আসনের ৭.১৮ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। স্ট্যালিনের নেতৃত্বাধীন ডিএমকে সরকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে নতুন জনসংখ্যার ভিত্তিতে ডিলিমিটেশন হলে এই সংখ্যা কমে যাবে। ৫ মার্চ সর্বদলীয় বৈঠকে এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়, যেখানে বলা হয়, তামিলনাড়ুর বর্তমান প্রতিনিধিত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। স্ট্যালিন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আহ্বান জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের জনগণনাকে ভিত্তি করে ২০২৬ থেকে ৩০ বছরের জন্য আসন বণ্টন অপরিবর্তিত রাখার আশ্বাস সংসদে দিতে হবে।
এই দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে স্ট্যালিন বলেন, “যে রাজ্যগুলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, তাদের শাস্তি দেওয়া হলে এটি অন্যায় হবে। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দক্ষিণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব কমানো গ্রহণযোগ্য নয়।” জেএসি এই দাবিকে জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সমন্বিত আইনি ও রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করবে।

জনগণ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই বৈঠককে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভান্থ রেড্ডি ডিলিমিটেশনকে “দক্ষিণ ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” বলে অভিহিত করেছেন। কেরলের পিনারাই বিজয়ন বলেন, “এটি সংঘবদ্ধতার প্রশ্ন। আমরা একসঙ্গে লড়ব।” তবে, বিজেপি এই বৈঠককে “ভ্রান্তিমূলক নাটক” বলে সমালোচনা করেছে। বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, ডিলিমিটেশন জনসংখ্যার ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে এবং এতে সংঘবদ্ধতার কোনো ক্ষতি হবে না। চেন্নাইয়ের একজন বাসিন্দা বলেন, “আমাদের রাজ্যের অবদানকে অবমূল্যায়ন করা যায় না। এই বৈঠক আমাদের অধিকার রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” তবে, কেউ কেউ মনে করেন, এটি কেবল রাজনৈতিক কৌশল, যা বিজেপি বিরোধী জোটকে শক্তিশালী করার চেষ্টা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আজকের বৈঠক সকাল ১০টায় আইটিসি গ্র্যান্ড চোলা হোটেলে শুরু হবে এবং দুপুর পর্যন্ত চলবে। এরপর অংশগ্রহণকারীরা একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ গ্রহণ করবেন। এই বৈঠকের ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারিত হবে। স্ট্যালিন বলেন, “এটি আমাদের সম্মিলিত যাত্রার প্রথম ধাপ। আমরা ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব অর্জন করব।” ডিলিমিটেশন নিয়ে তামিলনাড়ুর এই উদ্যোগ দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি নতুন ঐক্যের সূচনা করেছে। স্ট্যালিনের নেতৃত্বে জেএসি কেন্দ্রের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে। তবে, এই বৈঠক ভারতের সংঘবদ্ধ কাঠামোর ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।