অতিবৃষ্টিতে প্লাবিত মাণ্ডি, ধস ও বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন

হিমাচল প্রদেশের মাণ্ডি (Mandi Heavy Rain) জেলার ধরমপুর শহরে সোমবার রাতের মেঘভাঙা বৃষ্টিতে যেন তছনছ হয়ে গেছে জীবনযাত্রা। এক রাতের মধ্যে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক…

Floods and Landslides Ravage Mandi as Monsoon Rains Pound Region

হিমাচল প্রদেশের মাণ্ডি (Mandi Heavy Rain) জেলার ধরমপুর শহরে সোমবার রাতের মেঘভাঙা বৃষ্টিতে যেন তছনছ হয়ে গেছে জীবনযাত্রা। এক রাতের মধ্যে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যা ধরমপুরের বাসস্ট্যান্ড ও বাজারকে সম্পূর্ণ জলের তলায় নিয়ে যায়। রাজ্য পরিচালিত হিমাচল রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (এইচআরটিসি) একাধিক বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও দোকানপাট মুহূর্তের মধ্যে ভেসে যায়। পাশাপাশি, প্রচুর বাড়িঘর ও দোকান ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে বলে জানা গিয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত খবর অনুযায়ী, একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশাসন এবং উদ্ধারকারী দল নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজে তৎপরতা চালাচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিগত ২০১৫ সালের বন্যার তুলনায় এবারের ধ্বংসযজ্ঞ আরও ভয়াবহ।

   

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার রাত প্রায় ১১টা নাগাদ প্রবল বর্ষণ শুরু হয় এবং রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে থাকে। রাত একটা নাগাদ পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে বহু মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেন। প্রবল স্রোতের কারণে রাস্তাঘাট, সেতু এবং বাজার এলাকা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুযায়ী, মাত্র কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে ধরমপুরের বাসস্ট্যান্ড(Mandi Heavy Rain) যেন এক বিশাল জলাশয়ে পরিণত হয়। বহু যাত্রীবাস ও ছোট গাড়ি মুহূর্তের মধ্যে বানের স্রোতে ভেসে যায়। দোকানপাটের ভেতরে জল ঢুকে ব্যবসায়ীদের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। অনেক দোকানদার নিজেদের পণ্যসামগ্রী বাঁচাতে না পেরে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। জেলার প্রশাসন ইতিমধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) এবং পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছে। উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের নিরাপদে বের করে আনার চেষ্টা চলছে। তীব্র স্রোতের কারণে বহু জায়গায় রাস্তা কেটে গেছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ধরমপুর শহরের পাশাপাশি আশেপাশের গ্রামগুলিতেও বন্যার জল ঢুকে পড়েছে।

Advertisements

প্রশাসনের তরফে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সেখানে রাখা হচ্ছে। জেলা শাসক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হবে। বন্যার কারণে বিদ্যুৎ ও টেলিকম পরিষেবাতেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বহু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, সাউন নদীর জল এই মাত্রায় কখনোই দেখা যায়নি। পাহাড়ি ঝর্নার জল নেমে এসে দ্রুত বেগে শহরে ঢুকে পড়ে। ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বহু বাড়ি ও দোকান ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে।

হিমাচল প্রদেশে বর্ষাকালে প্রায়ই ভূমিধস ও বন্যার ঘটনা ঘটে থাকে। তবে এবারের মেঘভাঙা বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যা তার চেয়েও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে আবহাওয়া দফতর আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। ফলে প্রশাসনকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষকেও নিরাপদে থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সব মিলিয়ে ধরমপুরের এই বিপর্যয় হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের নাজুক পরিস্থিতি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের দুর্যোগের মাত্রা ও ঘনঘনতা বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন। এখন প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ হলো দ্রুত উদ্ধারকাজ শেষ করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।