ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের ফলে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় দিল্লি বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার ৯০টি ফ্লাইট (flights) বাতিল করা হয়েছে।
বিমানবন্দর (flights) সূত্র জানায়, বাতিল করা ফ্লাইটগুলোর (flights) মধ্যে রয়েছে ৪৬টি দেশীয় প্রস্থান, ৩৩টি দেশীয় আগমন, পাঁচটি আন্তর্জাতিক প্রস্থান এবং ছয়টি আন্তর্জাতিক আগমন ফ্লাইট। এই ফ্লাইটগুলো সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে নির্ধারিত ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের ২১টি বিমানবন্দর ১০ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
অপারেশন সিঁদুর ও পাকিস্তানের পাল্টা হামলা
৭ মে ভোরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (পিওজেকে) নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালায়। এই অভিযান, যা পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়, জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেএম), লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এবং হিজবুল মুজাহিদিনের ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে। হামলায় বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, সরজাল, মেহমুনা জয়া এবং পিওজেকের ভিম্বর, কোটলি ও মুজাফফরাবাদের পাঁচটি স্থান ধ্বংস করা হয়। এই অভিযানে ১০০ জনেরও বেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
জবাবে, পাকিস্তান ৭ মে রাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের আওয়ান্তিপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, অমৃতসর, কপুরথালা, জলন্ধর, লুধিয়ানা, আদমপুর, ভাটিন্ডা, চণ্ডীগড়, নাল, ফালোদি, উত্তরলাই এবং ভুজে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলার চেষ্টা করে। ভারতের ইন্টিগ্রেটেড কাউন্টার ইউএএস গ্রিড এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এই হামলা প্রতিহত করে। হামলার ধ্বংসাবশেষ বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে, যা পাকিস্তানের আক্রমণের প্রমাণ বহন করে।
বিমান চলাচলের উপর প্রভাব (flights)
অপারেশন সিন্দুরের পর উত্তর ভারতের বিমান (flights) চলাচল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। দিল্লি বিমানবন্দরে বুধবার মধ্যরাত থেকে ৩৫টি ফ্লাইট বাতিল হয়, যার মধ্যে ২৩টি দেশীয় প্রস্থান, আটটি দেশীয় আগমন এবং চারটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ছিল। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা বেড়ে ৯০টিতে পৌঁছেছে। ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইসজেট, আকাসা এয়ার এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের মতো এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট বাতিল বা পুনঃনির্ধারণ করেছে।
ইন্ডিগো তাদের ট্রাভেল অ্যাডভাইজরিতে জানিয়েছে, শ্রীনগর, জম্মু, অমৃতসর, লেহ, চণ্ডীগড়, ধরমশালা, বিকানের, জোধপুর, গোয়ালিয়র, কিশনগড় এবং রাজকোটে ফ্লাইট পরিচালনা ১০ মে সকাল ৫:২৯ পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। এয়ারলাইনটি ১৬৫টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং যাত্রীদের বিনামূল্যে পুনঃনির্ধারণ বা ফেরতের সুবিধা দিচ্ছে।
স্পাইসজেট বুধবার জানিয়েছিল, লেহ, শ্রীনগর, জম্মু, অমৃতসর, কান্ডলা এবং ধরমশালা বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় এই শহরগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা ১০ মে সকাল ৫:২৯ পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে। যাত্রীরা ফেরত বা বিকল্প ফ্লাইটের সুবিধা নিতে পারবেন।
দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট (flights) লিমিটেড (ডিআইএএল) একটি অ্যাডভাইজরি জারি করে জানিয়েছে, “আকাশসীমার পরিবর্তিত অবস্থার কারণে দিল্লি বিমানবন্দরে কিছু ফ্লাইট প্রভাবিত হয়েছে। যাত্রীদের সর্বশেষ তথ্যের জন্য তাদের এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ বা আমাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক প্রভাব
পাকিস্তান অপারেশন সিন্দুরের পর ৪৮ ঘণ্টার জন্য তার আকাশসীমা (flights) বন্ধ করে দেয়, যার ফলে কাতার এয়ারওয়েজসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন পাকিস্তানে ফ্লাইট স্থগিত করে। কোরিয়ান এয়ার, থাই এয়ারওয়েজ এবং তাইওয়ানের চায়না এয়ারলাইনস পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে দীর্ঘ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভারতে ৪৩০টি এবং পাকিস্তানে ১৪৭টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
‘অপারেশন সিঁদুর’ সরাসরি প্রভাবে বদল IPL গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ভ্যেনু
উত্তর ভারতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
অপারেশন সিন্দুরের পর উত্তর ভারতের বেশ কয়েকটি বড় শহরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান এবং গুজরাটের বিমানবন্দরগুলো সামরিক নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রীনগর, লেহ, জম্মু, অমৃতসর, পাঠানকোট, চণ্ডীগড়, জোধপুর, জয়সলমের, শিমলা, ধরমশালা, জামনগর, ভুজ, রাজকোট, পোরবন্দর, বিকানের, হিন্ডন, কিশনগড়, কান্ডলা এবং গোয়ালিয়র।
পাকিস্তানের গোলাগুলি ও ক্ষয়ক্ষতি
পাকিস্তান লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর কুপওয়ারা, বারামুল্লা, উড়ি, পুঞ্চ, মেন্ধর এবং রাজৌরি সেক্টরে মর্টার এবং ভারী ক্যালিবার আর্টিলারি ব্যবহার করে গোলাগুলি বাড়িয়েছে। এতে ১৬ জন নিরীহ মানুষ, যার মধ্যে তিনজন মহিলা এবং পাঁচজন শিশু, প্রাণ হারিয়েছে। ভারত এই গোলাগুলি বন্ধ করতে পাল্টা হামলা চালায়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় দেশকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্র সংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সামরিক সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। চীন, বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত শান্তি আলোচনার সমর্থন করেছে।
অপারেশন সিঁদুর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রমাণ। তবে, আকাশসীমা বন্ধ এবং ফ্লাইট বাতিলের ফলে যাত্রীদের ব্যাপক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় উভয় দেশের সংযম প্রয়োজন।