গান্ধীনগরে জিকা ভাইরাস (Zika virus ) সংক্রমণের ঘটনা সামনে এল। গান্ধীনগরের এক ৭০ বছর বয়সী ব্যক্তি সম্প্রতি জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার গুজরাট স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে এই খবর জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রায় চার দিন আগে ব্যক্তির জিকা সংক্রমণের রিপোর্ট আসে, যদিও তিনি হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছিলেন সপ্তাহখানেক আগেই। গান্ধীনগরের ওই ব্যক্তি ঠান্ডা, জ্বর এবং গাঁটে ব্যথা নিয়ে ২৪ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হন। তারপর তাকে আহমেদাবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেফার করা হয়, যেখানে তার শরীরের নমুনা পরীক্ষা করতে পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি)-তে পাঠানো হয়েছিল।
জিকা ভাইরাস মূলত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রমণের উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে ফুসকুড়ি, জ্বর, চোখে প্রদাহ, পেশি ও গাঁটে ব্যথা। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে, যেমন মাইক্রোসেফালি এবং অন্যান্য জন্মগত ত্রুটি। এমনকি এটি আগাম প্রসব বা গর্ভপাতের ঝুঁকিও বাড়ায়।
চিকিৎসা ও সেরে ওঠা
এই সংক্রমণ সন্দেহে গুজরাট স্বাস্থ্য দপ্তর ব্যক্তির শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে এনআইভিতে পাঠায়। পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় যে ওই ব্যক্তি জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। তৎক্ষণাৎ তার চিকিৎসা শুরু করা হয় এবং রোগী সেরে ওঠার পর সপ্তাহখানেক আগে তাকে বাড়ি পাঠানো হয়।
এদিকে, রিপোর্ট হাতে আসার পর গুজরাট স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়। তার বাড়ির আশপাশের এলাকায় সজাগ থেকে নজরদারি ও ট্র্যাকিং অভিযান চালায়। পাশাপাশি, তার পরিবারের সকল সদস্যের শরীরের নমুনা পরীক্ষা করা হয়, তবে সকলেই সংক্রমণ-মুক্ত বলে রিপোর্টে জানা গেছে।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও নজরদারি
স্থানীয় প্রশাসন আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক জরিপ চালায়। মশা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে জীবাণুনাশক প্রয়োগের মতো পদক্ষেপও নেওয়া হয়। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তর জানায়, এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার চালানো হবে এবং মশা জন্মানোর পরিবেশ নষ্ট করতে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখার জন্য উৎসাহিত করা হবে।
এডিস মশার হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য প্রশাসন জনসাধারণকে ফুল হাতা পোশাক পরার পরামর্শ দিয়েছে এবং ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে বলেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে এলাকাবাসীর সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন একযোগে কাজ করছে।
জিকা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, জিকা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলি ধ্বংস করা, প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরা এবং মশারি ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের সংক্রমণ এড়াতে অতিরিক্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
গুজরাটে এ ধরনের সংক্রমণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধে কাজ করছে, তেমনই সাধারণ মানুষকেও এই ভাইরাস নিয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।