ছত্তীসগড়ে মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে এফআইআর, অমিত শাহকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য

তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে ছত্তীসগড়ের রাজধানী রায়পুরে একটি প্রথম তথ্য প্রতিবেদন (এফআইআর) দায়ের হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে লক্ষ্য করে তাঁর দেওয়া এক…

Mahua Moitra Amit Shah controversy

তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে ছত্তীসগড়ের রাজধানী রায়পুরে একটি প্রথম তথ্য প্রতিবেদন (এফআইআর) দায়ের হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে লক্ষ্য করে তাঁর দেওয়া এক বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই অভিযোগ ওঠে। শনিবার (৩০ আগস্ট) রায়পুরের মানা থানায় স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল সমান্তোর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (Bharatiya Nyaya Sanhita বা BNS)-এর ১৯৬ ও ১৯৭ ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

   

ধারা ১৯৬: ধর্ম, জাতি, জন্মস্থান, ভাষা ইত্যাদির ভিত্তিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানো।
ধারা ১৯৭: জাতীয় সংহতির বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য বা প্রচার।

এই দুই ধারার অভিযোগে মামলাটি যথেষ্ট গুরুতর বলে মনে করছে পুলিশ।

বিতর্কের সূত্রপাত পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায় একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহুয়া মৈত্রর মন্তব্য ঘিরে। অভিযোগ, তিনি বলেন, “যদি অমিত শাহ বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হন, তবে প্রথম কাজ হওয়া উচিত অমিত শাহর মাথা কেটে টেবিলে রাখা।”

এই মন্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। যদিও সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ভিডিওটির সত্যতা তারা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

অভিযোগকারী গোপাল সমান্তো পুলিশকে জানান, মহুয়া মৈত্রর এই মন্তব্য সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং উত্তেজনা ছড়াতে সক্ষম। তাঁর দাবি, রায়পুরের মানা ক্যাম্প এলাকায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শরণার্থী বসতি গড়ে তোলে। এই শরণার্থীরা এখনো সেখানে বসবাস করেন। মহুয়া মৈত্রর বক্তব্যের ফলে তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে যে, অন্য সম্প্রদায় তাঁদের লক্ষ্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারে। সমান্তোর দাবি—এমন মন্তব্য সরাসরি সামাজিক সম্প্রীতিকে বিপন্ন করে।

রায়পুর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক বলেন, “অভিযোগ গুরুতর। ভিডিও ও বক্তব্যের উৎস যাচাই করা হবে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

Advertisements

এই বিতর্কিত মন্তব্যের পর তৃণমূল সাংসদ বলেন, তিনি কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অদক্ষতা’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর মতে, সীমান্ত নিরাপত্তা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব এবং অনুপ্রবেশ রোধে ব্যর্থতার জন্য দায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে। তবে ‘অশালীন বা উসকানিমূলক ভাষা’ ব্যবহারের অভিযোগকে তিনি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন।

এই ঘটনা ঘিরে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, মহুয়া মৈত্র বারবার উসকানিমূলক মন্তব্য করে থাকেন। তাঁদের দাবি, সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর এই মন্তব্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর জন্য কড়া শাস্তি হওয়া উচিত।

তৃণমূল কংগ্রেসের শিবিরে অবশ্য দাবি, বিজেপি রাজনৈতিকভাবে চাপ তৈরি করতে চায়। তাঁদের মতে, মহুয়া কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন। মন্তব্যকে বিকৃত করে ছড়ানো হচ্ছে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, BNS-এর ১৯৬ ও ১৯৭ ধারায় মামলা রুজু হওয়ায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলে এটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। এই ধারাগুলি জাতীয় সংহতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে। তবে আদালতে ভিডিওর সত্যতা, বক্তব্যের প্রেক্ষাপট এবং আসল অর্থ—সবই প্রমাণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। একাংশ মনে করছে, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে শালীনতা বজায় রাখা উচিত, কারণ তাঁদের কথাবার্তা সাধারণ মানুষের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। আবার অন্য অংশ বলছে, মহুয়া মৈত্র আসলে কেন্দ্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, সেটিকে বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে।

মহুয়া মৈত্রর বক্তব্য নিয়ে এই মুহূর্তে দেশব্যাপী বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রায়পুর পুলিশের এফআইআর নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আগামী দিনে তদন্ত কীভাবে এগোয় এবং আদালতে এই মামলা কতদূর গড়ায়, তার উপরই নির্ভর করবে মহুয়া মৈত্রর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও জনসমর্থনে প্রভাব।