ভ্রূণস্থ ভ্রূণ কী? বিরল এই অবস্থার পেছনে কারণ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা

সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে একটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, যা চিকিৎসা জগতের জন্য এক বিশাল আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা ‘Fetus-in-fetu’ বা ‘ভ্রূণস্থ ভ্রূণ’-এর ধারণা প্রকাশ…

An Indian pregnant woman in a hospital room, sitting on a hospital bed with a gentle smile on her face

সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে একটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, যা চিকিৎসা জগতের জন্য এক বিশাল আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা ‘Fetus-in-fetu’ বা ‘ভ্রূণস্থ ভ্রূণ’-এর ধারণা প্রকাশ করেছে, যেখানে একজন যমজ ভ্রূণ অপর যমজ ভ্রূণের শরীরে, বিশেষত পাকস্থলীতে, অবস্থান করে। এই ধরনের অবস্থা পৃথিবীজুড়ে অত্যন্ত বিরল এবং ইতিহাসে মাত্র কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে এমনটি ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনা নিয়ে নানা তত্ত্ব এবং বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছেন। তবে, এই বিরল অবস্থাটি আসলে কী, এর কারণ কী এবং এর চিকিৎসা কীভাবে করা হয়, তা এখনো বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

‘Fetus-in-fetu’ বা ‘ভ্রূণস্থ ভ্রূণ’ কী?
‘ভ্রূণস্থ ভ্রূণ’ একটি বিরল জন্মগত অবস্থানজনিত অস্বাভাবিকতা, যেখানে একটি ভ্রূণ অপর ভ্রূণের শরীরে অবস্থান করে এবং এটি এক ধরনের উন্নত টিউমারের মতো শারীরিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারে। এটি সাধারণত তখন ঘটে যখন দুটি যমজ ভ্রূণ গর্ভধারণের প্রথম দিকে একে অপরের থেকে সম্পূর্ণরূপে বিভক্ত হতে ব্যর্থ হয়। এই অবস্থা পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৫ লক্ষের মধ্যে একবার ঘটে, যা এটিকে অত্যন্ত বিরল করে তোলে।

   

ভ্রূণস্থ ভ্রূণের কারণ
এই বিরল অবস্থার জন্য বেশ কিছু কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিম্নে এই কারণগুলির বিশদ আলোচনা করা হলো:

১. একই জাইগোট থেকে অসম্পূর্ণ বিভাজন
যখন দুটি যমজ ভ্রূণ একই জাইগোট (একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু) থেকে তৈরি হয়, তখন প্রাথমিকভাবে এটি বিভক্ত হতে শুরু করে। কিন্তু কখনো কখনো, এই বিভাজন সম্পূর্ণভাবে ঘটে না এবং একটি ভ্রূণ অপর ভ্রূণের মধ্যে আটকে যেতে পারে। এই অবস্থায় এক ভ্রূণ অপর ভ্রূণের শরীরে বিকাশ লাভ করে এবং ‘ভ্রূণস্থ ভ্রূণ’ সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণত গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটে থাকে।

২. এমব্রিওনিক বিকাশের সময় অস্বাভাবিকতা
গর্ভধারণের প্রথম দিকে কোষ বিভাজন এবং গঠন প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয় না, তখন একটি ভ্রূণ অপর ভ্রূণের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। এই অবস্থাটিকে একটি উন্নত টেরাটোমার মতো মনে করা হতে পারে, যেহেতু এর মধ্যে নানা ধরনের শরীরিক বৈশিষ্ট্য যেমন চুল, দাঁত, হাড় এবং অন্যান্য শরীরের অঙ্গ থাকতে পারে।

৩. টেরাটোমার সঙ্গে বিভ্রান্তি
কিছু চিকিৎসাবিজ্ঞানী মনে করেন যে ‘Fetus-in-fetu’ আসলে একটি টেরাটোমার উন্নত রূপ হতে পারে, যা একটি টিউমারের মতো বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ধারণ করতে পারে। টেরাটোমা সাধারণত এক ধরনের অস্বাভাবিক টিউমার যা শরীরের বিভিন্ন অংশ ধারণ করতে পারে। তবে এই অবস্থার জন্য গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

৪. জিনগত বা পরিবেশগত কারণ
ভ্রূণস্থ ভ্রূণের ঘটনার পেছনে কখনো কখনো জিনগত কারণ এবং মাতৃগর্ভের পরিবেশের প্রভাবও কাজ করতে পারে। যেকোনো অস্বাভাবিকতা বা পরিবেশগত পরিবর্তন ভ্রূণের বিকাশে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যেখানে এক ভ্রূণ অপর ভ্রূণের শরীরে গঠিত হয়।

এই অবস্থার প্রভাব এবং চিকিৎসা
এই বিরল অবস্থায় পেটের মধ্যে একটি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা ব্যথা দেখা দিতে পারে। সাধারণত, এই ধরনের অবস্থার কোনো প্রভাব দেখা দিলে চিকিৎসকদের কাছে দ্রুত পৌঁছানো উচিত। চিকিৎসার জন্য অস্ত্রোপচার বা সার্জারি প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়, যেখানে ভ্রূণটিকে শরীর থেকে বের করা হয় এবং কোনও জটিলতা তৈরি হওয়ার আগেই চিকিৎসা করা হয়।

এটি অবশ্যই একটি জরুরি চিকিৎসা অবস্থা, কারণ এটি অনেক সময় শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলতে পারে এবং জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে অস্ত্রোপচার ছাড়া এই অবস্থার চিকিৎসা সম্ভব নয়। তবে যেহেতু এটি খুবই বিরল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি দ্রুত শনাক্ত করা এবং ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।

বিরল এই অবস্থার প্রভাব
‘Fetus-in-fetu’ পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৫ লক্ষের মধ্যে একবার ঘটে, যা এটিকে বিরলতম হিসেবে চিহ্নিত করে। গত কয়েক বছরে বিশ্বে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে এই অবস্থায় ভ্রূণরা তাদের অন্য ভ্রূণের শরীরে বিকাশ লাভ করেছে, কিন্তু এর সংখ্যা খুবই কম। এই ঘটনার পেছনে নতুন কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণাও চলছে, এবং এই বিষয়টি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে চিকিৎসা বিশ্বে। মহারাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এই ঘটনাটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য এক বিশাল আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। এর মাধ্যমে আরও নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হবে তা নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা হতে পারে।

‘Fetus-in-fetu’ একটি বিরল এবং অস্বাভাবিক ঘটনা, যা প্রায় ৫ লক্ষের মধ্যে ১টি ক্ষেত্রে ঘটে। এই অবস্থার কারণ এবং চিকিৎসা নিয়ে এখনও বহু গবেষণা চলছে। তবে এটি যে মানুষের শরীরে কোন অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করতে পারে, সেটি সত্যি। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে ভবিষ্যতে এই ধরনের বিরল অবস্থা সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানা যাবে এবং এর চিকিৎসা প্রক্রিয়া আরও উন্নত হবে।

এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হলেও, পৃথিবীজুড়ে এমন বিরল ঘটনা অনুসন্ধানে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।