বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে আসা কাউকেই হোটেলে রাখা হবে না এমন সিদ্ধান্তের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি বুঝে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে (Tripura) ত্রিপুরায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ রাজ্যের কিছু হোটেল ব্যবসায়ী ও কর্মচারি Kolkata 24×7-কে জানিয়েছেন, “বড্ড বাড়াবাড়ি সিদ্ধান্ত ছিল”। তারা বলেছেন বিপুল ক্ষতির মুছে পড়তে চলেছিল রাজ্যের হোটেল ব্যবসা। নিষেধাজ্ঞা নিয়মটি বাংলাদেশি রোগী বা তার পরিবারের সদস্যদের জন্য আর নেই।
বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় প্রতিবাদে সামিল ক্ষমতাসীন দল ও বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। সেরকমই এক সংগঠনের সদস্যরা হামলা করেছিল আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ সরকারি হাইকমিশনে। দূতাবাসে হামলার রেশ ধরে কূটনৈতিক পরিস্থিতি আরও গরম হয়। ভারত সরকার দু:খ প্রকাশ করে। এর মাঝে ত্রিপুরার কোনো হোটেলে বাংলাদেশিদের থাকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
ত্রিপুরার প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএমের তরফে বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলার কড়া নিন্দা করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা মানিক সাহা নিন্দা জানান। সেই সঙ্গে আগরতলাসহ রাজ্যের অন্যত্র হোটেল মালিকদের সিংহভাগ বাংলাদেশিদের নিষিদ্ধ করার বার্তায় ব্যবসার ক্ষতি আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
সংবাদপত্র ‘ত্রিপুরা দর্পণ’-এর খবর “সমালোচনার মুখে বাংলাদেশী নিষিদ্ধ হোটেলে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার”, আর প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ”শাসকদলের মদতপুষ্ট একটি প্রভাবশালী সংগঠনের চাপে পড়ে সারা রাজ্যে হোটেল এবং রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশীদের স্থান ও খাবার না দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অল ত্রিপুরা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজ্যের সুশীল সমাজের প্রচন্ড সমালোচনার মুখে পড়েন এসোসিয়েশনের অতি উৎসাহী কর্মকর্তারা। এমনকি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাজ্যের বেশিরভাগ হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মালিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।”
North East Today জানিয়েছে, ত্রিপুরার হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের ওপর তাদের আগের নিষেধাজ্ঞার সংশোধন করেছে। অল ত্রিপুরা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (ATHROA) সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আসা দর্শকদের বিষয়ে তাদের নীতি শিথিল করেছে।
‘ত্রিপুরা দর্পন’ জানিয়েছে, “অল ত্রিপুরা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স এসোসিয়েশন নিশ্চিত করতে চায়, যদিও আমরা প্রতিবাদ করি না কেন, যদি কোন রোগী বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা জনিত কারণে আগরতলায় আসেন তবে অবশ্যই হোটেল এবং রেস্টুরেন্টের পরিষেবা পাবেন। বকলমে এই ভাষাতেই বাংলাদেশীদের হোটেলের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করে নেয় এসোসিয়েশন।”
জানা যাচ্ছে, হোটেলে বাংলাদেশি নিষিদ্ধ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে ত্রিপুরা জুড়েই ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। North East News জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার, অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা করেছে মেডিকেল ভিসাধারী ব্যক্তিদের এখন স্বাগত জানানো হবে এবং অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলিতে আবাসন এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হবে।
বাংলাদেশিদের হোটেলে থাকা নিষিদ্ধ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে বলেই জানিয়েছেন একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী ও কর্মী। তারা বলেছেন এ রাজ্যে বিগচ বাম জমানায় এমন হয়নি। তারা বলেছেন, সবাই ভালো করেই জানেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার জন্য কোনও ভ্রমণ ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ থেকে কোন পর্যটক আসার প্রশ্নই উঠে না। বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র মেডিকেল ভিসা নিয়ে যারা ত্রিপুরায় আসছেন তাদের জন্য হোটেলে থাকা নিষিদ্ধ করার যুক্তি অমানবিক। তীব্র সমালোচনার মুখে বাংলাদেশিদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তটি শিথিল করতে বাধ্য হয় হোটেল এসোসিয়েশন।
বাংলাদেশ দিয়ে ঘেরা ত্রিপুরা। এ রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা যাওয়া বেশি হয়। উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ও সাধারণ যাত্রীর যাতায়াত মূলত হয় আগরতলার বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে। তবে হামলার পর দূতাবাস থেকে আপাতত কূটনৈতিক পরিষেবা বন্ধ।
ত্রিপুরার মতো পশ্চিমবঙ্গেও বিক্ষোভ চলছে। এ রাজ্যেও বিভিন্ন হোটেলে বাংলাদেশিদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মালদার হোটেল ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি বয়কট করেছেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যতদিন না বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, ততদিন ওপারের নাগরিকদের জন্য মালদার হোটেল এবং রেস্তোরাঁর দরজা বন্ধ থাকবে।
Tripura is surrounded by Bangladesh. There is a lot of traffic coming and going from Bangladesh in this state. Bangladesh’s commercial transactions and general passenger traffic with other states in the northeastern region are mainly through the Bangladesh assistance high commission in Agartala. However, diplomatic services from the embassy are currently closed after the attack.