খালিস্তানি জঙ্গি হরপ্রীত সিং আমেরিকায় এফবিআইয়ের জালে

পাঞ্জাবে অন্তত ১৪টি জঙ্গি হামলার জন্য অভিযুক্ত এবং পাকিস্তান-ভিত্তিক গ্যাংস্টার-থেকে-জঙ্গি হরবিন্দর সিং সান্ধু ওরফে রিন্দার ঘনিষ্ঠ সহযোগী, বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল (বিকেআই)-এর সঙ্গে যুক্ত পলাতক গ্যাংস্টার…

FBI Arrests Khalistani Terrorist Harpreet Singh Linked to Punjab Attacks

পাঞ্জাবে অন্তত ১৪টি জঙ্গি হামলার জন্য অভিযুক্ত এবং পাকিস্তান-ভিত্তিক গ্যাংস্টার-থেকে-জঙ্গি হরবিন্দর সিং সান্ধু ওরফে রিন্দার ঘনিষ্ঠ সহযোগী, বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল (বিকেআই)-এর সঙ্গে যুক্ত পলাতক গ্যাংস্টার হরপ্রীত সিং (Harpreet Singh) ওরফে হ্যাপি পাসিয়া আমেরিকা গ্রেপ্তার হয়েছেন। মার্কিন আমেরিকার ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড রিমুভাল অপারেশনস (ইআরও) গত শুক্রবার ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে হরপ্রীত সিংকে গ্রেপ্তার করেছে। এফবিআই-এর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলা হয়েছে, “আজ, পাঞ্জাব, ভারতে জঙ্গি হামলার জন্য অভিযুক্ত জঙ্গি হরপ্রীত সিংকে এফবিআই এবং ইআরও স্যাক্রামেন্টোতে গ্রেপ্তার করেছে। দুটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি অবৈধভাবে আমেরিকা প্রবেশ করেছিলেন এবং ধরা এড়াতে বার্নার ফোন ব্যবহার করছিলেন।”

Advertisements

গ্রেপ্তারের পটভূমি ও অভিযোগ

হরপ্রীত সিং, যিনি হ্যাপি পাসিয়া নামেও পরিচিত, পাঞ্জাবে একাধিক জঙ্গি হামলার জন্য ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) দ্বারা অভিযুক্ত। তিনি বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল (বিকেআই) এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই)-এর সঙ্গে সহযোগিতা করে জঙ্গি কার্যকলাপ পরিচালনা করছিলেন বলে অভিযোগ। এফবিআই জানিয়েছে, হরপ্রীত ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চণ্ডীগড়ে একটি গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন, যেটি একজন অবসরপ্রাপ্ত পাঞ্জাব পুলিশ অফিসারকে লক্ষ্য করে করা হয়েছিল। এই হামলার জন্য তিনি পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি রিন্দার সঙ্গে সমন্বয় করেছিলেন।

   

ভারতে হরপ্রীত সিং অত্যন্ত পলাতক অপরাধী হিসেবে বিবেচিত, এবং তার মাথার উপর ৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। গত ছয় মাসে পাঞ্জাবে ১৪টি জঙ্গি হামলার দায়িত্ব তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন। এই হামলাগুলির মধ্যে অমৃতসরে পুলিশ প্রতিষ্ঠানগুলির উপর বিস্ফোরণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি অবৈধভাবে আমেরিকা প্রবেশ করেছিলেন এবং ধরা এড়াতে অপ্রচ্ছন্ন বার্নার ফোন এবং এনক্রিপ্টেড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছিলেন।

বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল এবং জঙ্গি নেটওয়ার্ক

বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল (বিকেআই) খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন, যারা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে। এই সংগঠনটি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮০-এর দশকে পাঞ্জাবে জঙ্গি কার্যকলাপে সক্রিয় ছিল। ১৯৮৫ সালে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২-এর বোমা হামলা, যাতে ৩২৯ জন নিহত হয়েছিল, বিকেআই-এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। সংগঠনটি বর্তমানে পাকিস্তান, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপে সক্রিয় এবং পাকিস্তানের আইএসআই-এর সমর্থনে কাজ করে।

এনআইএ-এর তদন্ত অনুসারে, হরপ্রীত সিং এবং রিন্দা চণ্ডীগড় গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তারা ভারত-ভিত্তিক জঙ্গিদের অর্থ, অস্ত্র, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। হরপ্রীত আমেরিকা থেকে তরুণদের উগ্রপন্থী করে তুলতে এবং ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য উৎসাহিত করতেন।

Advertisements

আমেরিকায়ে গ্রেপ্তার ও ভারতের প্রতিক্রিয়া

হরপ্রীত সিং-এর গ্রেপ্তার ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সহযোগিতার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে তার প্রত্যর্পণের জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এনআইএ ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ চণ্ডীগড় গ্রেনেড হামলার জন্য হরপ্রীত সিং সহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছিল।

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বিশ্বাস করে যে হরপ্রীত সিং-এর গ্রেপ্তার বিকেআই-এর আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করতে পারে। পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিচালক গৌরব যাদব জানিয়েছেন, হরপ্রীত পাঞ্জাবে লক্ষ্যবস্তু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিলেন এবং তার সহযোগীরা অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করছিলেন।

হরপ্রীত সিং-এর গ্রেপ্তার খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের চলমান লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। পাঞ্জাবে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা এবং আইএসআই-এর সমর্থনে বিকেআই-এর ক্রিয়াকলাপ ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গ্রেপ্তার ভারত-আমেরিকার সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতাকে শক্তিশালী করবে এবং পাঞ্জাবে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। তবে, বিকেআই-এর আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এবং আইএসআই-এর সমর্থনের কারণে এই হুমকি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে আরও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখন হরপ্রীত সিং-এর প্রত্যর্পণ এবং তার জঙ্গি নেটওয়ার্কের সম্পূর্ণ তদন্তের দিকে মনোনিবেশ করবে।