Rakesh Tikait car accident: বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইতের গাড়ি

ভারতীয় কৃষক আন্দোলনের একজন প্রধান মুখ, ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেউ) নেতা রাকেশ টিকাইত (Rakesh Tikait) শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের মীরাপুর বাইপাসে এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে…

Farmer Leader Rakesh Tikait

short-samachar

ভারতীয় কৃষক আন্দোলনের একজন প্রধান মুখ, ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেউ) নেতা রাকেশ টিকাইত (Rakesh Tikait) শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের মীরাপুর বাইপাসে এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন। তাঁর গাড়ির সামনে হঠাৎ একটি নীলগাই (ব্লু বুল) এসে পড়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ফলে গাড়ির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে এয়ারব্যাগ খুলে যাওয়ায় তিনি ও গাড়িতে থাকা অন্যান্য যাত্রীরা আঘাত থেকে রক্ষা পান। এই ঘটনা কৃষক সমাজে এবং তাঁর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

   

রাকেশ টিকাইত নিজে এই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানিয়েছেন, “ঘটনাটি ঘটে রাত প্রায় সাড়ে সাতটার দিকে। আমরা মীরাপুর বাইপাস দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কোথা থেকে একটি নীলগাই এসে গাড়ির সামনে পড়ে। সবকিছু এক মুহূর্তের মধ্যে ঘটে গেল। প্রথমে কিছুই বুঝতে পারিনি। চোখ খুলে দেখি এয়ারব্যাগ আমাদের চারপাশে খুলে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “গাড়িটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু আমরা সিটবেল্ট পরে ছিলাম বলে বড় ক্ষতি এড়ানো গেছে।” এই দুর্ঘটনায় টিকাইত ও তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা অক্ষত থাকলেও, ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

মুজফ্ফরনগরের এই এলাকায় নীলগাইয়ের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। এই বন্য প্রাণীটি প্রায়ই রাস্তায় এসে পড়ে এবং দুর্ঘটনার কারণ হয়। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে যে, তারা এই সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। তবে টিকাইতের মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটায় এলাকার সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

দুর্ঘটনার পর রাকেশ টিকাইত সিটবেল্টের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে বলেছেন, “প্রত্যেকেরই সিটবেল্ট পরা উচিত। আমরা যদি সিটবেল্ট না পরতাম, তাহলে আজ এই দুর্ঘটনায় বড় ক্ষতি হতে পারত। গাড়ি চালানোর সময় সবসময় সিটবেল্ট ব্যবহার করা দরকার।” তিনি আরও পরামর্শ দিয়েছেন, “গাড়ির গতি ১০০ কিলোমিটারের নিচে রাখা উচিত। নিরাপদে গাড়ি চালালে এমন দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো যায়।” তাঁর এই বক্তব্য সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতার একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে কাজ করেছে।

রাকেশ টিকাইত ভারতের কৃষক আন্দোলনের একটি পরিচিত নাম। ২০২০-২১ সালে তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লির সীমানায় চলা আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান নেতা। তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কৃষকদের একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। তাঁর পিতা মহেন্দ্র সিং টিকাইতও ছিলেন একজন প্রখ্যাত কৃষক নেতা, যিনি ১৯৮০-র দশকে কৃষকদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন। রাকেশ টিকাইত সেই উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে গাজিপুর সীমানায় তাঁর আবেগপ্রবণ বক্তৃতা এবং অশ্রুসিক্ত মুখ ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনা কৃষক আন্দোলনকে নতুন গতি দিয়েছিল। এবার তাঁর দুর্ঘটনার খবরে কৃষক সমাজে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তিনি নিরাপদে থাকায় সমর্থকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।

এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে টিকাইতের সমর্থকরা তাঁর জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। একজন সমর্থক লিখেছেন, “ভগবানের কৃপায় আমাদের নেতা নিরাপদে আছেন। সিটবেল্ট তাঁকে বাঁচিয়েছে।” আরেকজন লিখেছেন, “টিকাইতজির জন্য প্রার্থনা করছি। তিনি আমাদের কৃষকদের গর্ব।” বিকেউ-র একজন স্থানীয় নেতা বলেন, “আমরা শুনে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু তিনি ঠিক আছেন জেনে আমরা আনন্দিত।”

এই দুর্ঘটনা উত্তরপ্রদেশের গ্রামীণ রাস্তায় সড়ক নিরাপত্তার সমস্যাকে সামনে এনেছে। মীরাপুর বাইপাসের মতো এলাকায় বন্যপ্রাণীদের রাস্তায় আসা একটি সাধারণ সমস্যা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নীলগাইয়ের মতো প্রাণীরা প্রায়ই রাস্তায় চলে আসে, যা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে রাস্তার পাশে বেড়া দেওয়া এবং গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের দাবি উঠেছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই রাস্তায় প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের উচিত এই সমস্যার সমাধান করা। টিকাইতজির মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটলে তবেই কি তারা জাগবে?” উত্তরপ্রদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেশি হওয়ায় এই ঘটনা সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে।

রাকেশ টিকাইত বর্তমানে কৃষকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সরব। সম্প্রতি তিনি নয়ডা ও গ্রেটার নয়ডায় কৃষকদের জমি ক্ষতিপূরণ এবং ন্যূনতম সমর্থন মূল্যের (এমএসপি) দাবিতে আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন। গত ডিসেম্বরে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল, যখন তিনি দিল্লি যাওয়ার পথে ছিলেন। এই দুর্ঘটনার সময় তিনি সিসৌলি গ্রামে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

রাকেশ টিকাইতের এই দুর্ঘটনা তাঁর জীবনে একটি ভয়ানক মুহূর্ত হলেও, তিনি নিরাপদে থাকায় তাঁর সমর্থকরা স্বস্তি পেয়েছেন। তাঁর সিটবেল্ট ব্যবহারের পরামর্শ সাধারণ মানুষের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে, এই ঘটনা প্রশাসনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যাতে তারা গ্রামীণ এলাকার রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়। টিকাইতের এই অভিজ্ঞতা কৃষক সমাজের জন্যও একটি শিক্ষা, যে নিরাপত্তার প্রতি সচেতন থাকা কতটা জরুরি। তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও কৃষকদের হয়ে লড়াই চালিয়ে যান, এটাই তাঁর সমর্থকদের প্রার্থনা।