নয়াদিল্লি: হরিয়ানার ফরিদাবাদ (Faridabad ) থেকে বিশাল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ উদ্ধারের পর সেটি কীভাবে নিরাপদে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের হাতে পৌঁছায়, তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে একাধিক সংস্থা। জাতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু-র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ সম্প্রতি ২,৯০০ কেজি দাহ্য রাসায়নিক—যা সম্ভবত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বলে মনে করা হচ্ছে—ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার করে। এরপর সেটি এয়ারটাইট কনটেইনারে ভরে মিনি ট্রাকের মাধ্যমে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে শ্রীনগরের নৌগাম থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক দ্য হিন্দু-কে জানান, পদার্থটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং বিস্ফোরণের ঝুঁকি এড়াতে বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে পরিবহন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপুল পরিমাণ দাহ্য বস্তু কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এবং কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হত—তা এখন তদন্তের কেন্দ্রে।
দু’দিন ধরে গোপন পরিবহন—কেন এত সতর্কতা?
সূত্র অনুযায়ী, কনটেইনারগুলি সিল করে মিনি ট্রাকে লোড করা হয় এবং যাত্রাপথও ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত। নিরাপত্তা সূত্রের মত, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সাধারণত সার তৈরিতে ব্যবহৃত হলেও, সঠিক অনুপাত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি উচ্চ মাত্রার বিস্ফোরক হিসেবেও প্রয়োগ করা সম্ভব। ফলে এত বড় পরিমাণ দাহ্য পদার্থের পরিবহনে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
সাধারণত এই ধরনের পদার্থ পুলিশ বা NIA-এর নজরে এলে তা দ্রুত নিরাপদ জায়গায় পাঠানো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিবহনের সময় রাস্তার একাধিক পয়েন্টে নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল এবং কনভয় চলাচল ছিল গোপনীয়।
কে পাঠাচ্ছিল, কে গ্রহণ করছিল—মূল প্রশ্নে তদন্তকারীরা
এই ঘটনার মূল রহস্য ঘনীভূত হয়েছে উৎস ও গন্তব্যকে কেন্দ্র করে।
তদন্তকারীদের প্রধান প্রশ্ন—
কে ফরিদাবাদে এই বিশাল দাহ্য পদার্থ জমা করেছিল?
এর প্রকৃত গন্তব্য কোথায় হওয়ার কথা ছিল?
এটি কি শুধুই শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছিল, নাকি অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল?
একাধিক তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে, সাম্প্রতিক রাজধানী অঞ্চল এবং কাশ্মীর ঘিরে নিরাপত্তা সতর্কতার প্রেক্ষাপটে এই উদ্ধার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হতে পারে।
ডেলি ব্লাস্ট তদন্তের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে কি?
সম্প্রতি দিল্লির রেড ফোর্ট এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্ত চলার মাঝেই ফরিদাবাদ থেকে এই বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ উদ্ধারের খবর সামনে আসে। যদিও এখনও পর্যন্ত দুটি ঘটনার মধ্যে সরাসরি যোগের কোনো প্রমাণ প্রকাশ করেনি পুলিশ, তবে তদন্তকারীরা কোনো সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
দিল্লি ব্লাস্ট সংক্রান্ত মামলায় বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তাঁদের ফোন ডেটা, যাতায়াতের রেকর্ড, আর্থিক লেনদেন মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ফলে ফরিদাবাদের এই উদ্ধারও একই নজরে দেখা হচ্ছে।
নৌগাম থানায় কেন নিয়ে যাওয়া হল?
জম্মু ও কাশ্মীরের নৌগাম থানা গত কয়েক বছরে অতি সংবেদনশীল অপারেশন এবং উচ্চ ঝুঁকির সামগ্রী পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সেখানে রয়েছে বিশেষায়িত বিস্ফোরক সংরক্ষণ এলাকা। কর্মকর্তাদের মতে, দাহ্য পদার্থটি পরীক্ষাগারে পাঠানোর আগে আপাতত সেখানেই নিরাপদে রাখা হবে।
সরকারী প্রতিক্রিয়া
সরকারি সূত্র বলছে—
উদ্ধার হওয়া পদার্থটি পুরোপুরি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে এলেই তার প্রকৃত প্রকৃতি জানা যাবে।
তদন্ত কতটা বিস্তৃত হবে, তা নির্ভর করবে পদার্থটি বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহারযোগ্য কি না তার ওপর।
প্রয়োজনে NIA–কেও তদন্তে যুক্ত করা হতে পারে।
দুই দিনে ৮০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ রাস্তা অতিক্রম করে ২,৯০০ কেজি দাহ্য বস্তু শ্রীনগরে আসা—এটি নিছক উদ্ধার নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সূত্র। তদন্তকারীরা এখন উৎস, গন্তব্য এবং সম্ভাব্য নেটওয়ার্ক খুঁজে দেখছেন। পরীক্ষার রিপোর্ট ও ডিজিটাল ফরেনসিক তথ্য মিললেই মামলার প্রকৃতি আরও পরিষ্কার হবে।


