ফরিদাবাদ, ২১ নভেম্বর: জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আবারও চাঞ্চল্য। জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিস্তৃত ছায়া এবার সরাসরি উঠে এলো ফরিদাবাদের দেহার কলোনি থেকে। হারিয়ানা পুলিশ ও জম্মু–কাশ্মীর পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার করা হলো স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফিজ মোহাম্মদ ইশতিয়াককে।
অভিযোগ, ইমাম শুধু মাত্র বাড়ি ভাড়া দেননি, বরং জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ (JeM)–ঘনিষ্ঠ মডিউলকে বিপজ্জনক বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখার সরাসরি সুবিধা করে দিয়েছিলেন। তদন্তকারীদের দাবি এই বিস্ফোরকই ভবিষ্যতে বড় ধরনের নাশকতার জন্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা চলছিল।
ঘটনাটি সামনে আসে ১০ নভেম্বর, যখন দেহার কলোনিতে ভাড়া করা বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ২,৫৬৩ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ঠিক সেই ধরণের বিস্ফোরক যা দিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহার হয়েছিল। এই উদ্ধার অভিযান ঘিরে গোটা এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়, আর তার পরই তদন্তের জাল গিয়ে পৌঁছয় ইশতিয়াকের কাছে। পুলিশ সূত্রের দাবি গ্রেফতারকৃত কাশ্মীরি চিকিৎসক ড. মুজাম্মিল শাকিল দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি ব্যবহার করছিলেন সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার জন্য বিস্ফোরক মজুত করতে।
স্থানীয়দের কথায়, ইমাম হিসেবে ইশতিয়াকের পরিচয় ছিল খুবই শান্ত, ধর্মভীরু ও সংযত একজন ব্যক্তি হিসেবে। কেউই কল্পনা করতে পারেননি যে তাঁর বাড়ির আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে এমন ভয়াবহ পরিকল্পনা। প্রতিবেশীদের একজন জানান, “উনি কখনো কারও সঙ্গে ঝামেলা করতেন না।
নিয়মিত নামাজ পড়াতেন। আমরা কোনোদিনই ভাবতে পারিনি এ ধরনের কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত থাকতে পারেন।” তদন্তকারীদের মতে, এই স্বাভাবিক চরিত্রের আড়ালটাই ছিল জঙ্গি গোষ্ঠীর কাছে সবচেয়ে বড় সুবিধা—কারণ সন্দেহের তীর সহজে তার দিকে যায়নি।
জানা গেছে, ইশতিয়াক শুধু বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন তা নয়, বরং বিস্ফোরক রেখে যাওয়া–নেওয়া সময়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনায় সরাসরি সাহায্য করেছেন। তদন্তে উঠে এসেছে আরও তথ্য ড. মুজাম্মিলের সঙ্গে তাঁর বহুবার ব্যক্তিগত বৈঠক হয়েছে, ফোনে কথা হয়েছে, এমনকি বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আড়ালে গোপন বার্তাবিনিময়েরও অভিযোগ রয়েছে।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) তদন্ত শুরু করেছে এবং বিস্ফোরকের উৎস ও চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা সংস্থার সন্দেহ, এই মজুতকৃত বিস্ফোরক উত্তর ভারতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শহরকে টার্গেট করে জঙ্গি নাশকতা চালানোর পরিকল্পনার অংশ ছিল। তবে চূড়ান্ত নাশকতা প্রতিহত হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা মহল।
ফরিদাবাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ পুরো ঘটনার নিন্দা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য একজন ব্যক্তির ভুল ও অপরাধের দায় পুরো সম্প্রদায়ের নয়। এদিকে পুলিশের কড়া নজর এখন দেহার কলোনির চারপাশের যোগাযোগমাধ্যম, তহবিলের উৎস এবং এই নেটওয়ার্কে আর কারা যুক্ত রয়েছে সে দিকেও।
ইশতিয়াককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ট্রানজিট রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা দপ্তরের অনুমান, তাঁর কাছ থেকেই উঠে আসতে পারে আরও বড় নাশকতাকারী নেটওয়ার্কের তথ্য। তদন্ত চলছে, এবং জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কোনও ঝুঁকি না নিয়ে গোটা ঘটনার প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখছে।
ভারতজুড়ে বাড়তে থাকা জঙ্গি তৎপরতার মাঝে ফরিদাবাদের এই গ্রেফতার চিত্র স্পষ্ট সন্ত্রাস এখন আর সীমান্ত অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়, বরং শহরের অভ্যন্তরে সাধারণ জীবন–যাপনের ছদ্মাবরণে ঢুকে পড়ছে। ফলে নিরাপত্তা সংস্থার সামনে আরও কঠিন হচ্ছে প্রতিটি সন্দেহজনক সংযোগ নথিভুক্ত করা ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া।


