ফরিদাবাদ: হরিয়ানার ফরিদাবাদে এআই-নির্ভর (AI blackmail) ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তির অপব্যবহারে ঘটল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ১৯ বছর বয়সি এক কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছেন, অভিযোগ—তাঁর ও তাঁর দুই বোনের বিকৃত ছবি ও ভিডিও তৈরি করে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, এই ভয়ঙ্কর ঘটনার মূল কারণ ছিল এআই-তৈরি ভুয়ো কনটেন্ট ও ক্রমাগত সাইবার হুমকি।
মৃত ছাত্রের নাম রাহুল ভাটি, বয়স ১৯ বছর। ওল্ড ফরিদাবাদের বাসেলওয়া কলোনির বাসিন্দা রাহুল স্থানীয় কলেজের বি.কম ছাত্র ছিলেন। পরিবারের অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরে রাহুল মারাত্মক মানসিক চাপে ছিলেন এবং নিজের ঘরে একা সময় কাটাতেন।
শনিবার সন্ধ্যায়, দুটি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি রাহুলকে একটি মেসেজিং অ্যাপে যোগাযোগ করে জানায়—তাঁর ও তাঁর বোনদের বিকৃত এআই ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দেবে, যদি না সে ₹২০,০০০ টাকা দেয়। ভয় ও লজ্জায় রাহুল এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে, তিনি রাতেই নিজের ঘরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা বাঁচাতে পারেননি।
ফরিদাবাদ পুলিশের জনসংযোগ আধিকারিক যশপাল যাদব বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, অভিযুক্তরা রাহুলের ফোন হ্যাক করে তাঁর ব্যক্তিগত ছবি চুরি করেছিল। পরে AI সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিকৃত ছবি ও ভিডিও তৈরি করে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হয়।”
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের সন্ধানে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। রাহুলের মোবাইল ফোন, চ্যাট রেকর্ড, ও সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট বিশদভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে, কীভাবে ওই ভিডিও তৈরি ও প্রচার করা হয়েছিল তা জানার জন্য।
রাহুলের বাবা মনোজ ভাটি বলেছেন, “গত দু’সপ্তাহে ছেলেকে পুরোপুরি বদলে যেতে দেখেছি। সে খুব কম কথা বলত, ঠিক মতো খেত না, সারাক্ষণ নিজের ঘরে থাকত। ভাবিনি এত ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারে।”
এই ঘটনার পর সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এআই প্রযুক্তি এখন নতুন প্রজন্মের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। এর মাধ্যমে খুব সহজেই মানুষের মুখ ও কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে মিথ্যা ভিডিও বানানো সম্ভব হচ্ছে, যা সামাজিক ও মানসিকভাবে ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
দেশজুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে ‘ডিপফেক’ বা ‘এআই-তৈরি’ ভিডিওর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা ব্যবহার হচ্ছে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ, ব্ল্যাকমেল, বা অনলাইন হয়রানির কাজে। পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য, নাগরিকদের সাইবার সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। সন্দেহজনক কোনো মেসেজ বা ভিডিও পেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে অভিযোগ জানাতে হবে।
ফরিদাবাদ পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, “এই অপরাধচক্র যত বড়ই হোক, আমরা তাদের খুঁজে বের করব। রাহুলের মৃত্যু যেন আর একটিও তরুণ জীবনের ক্ষতি না ডেকে আনে।”


