মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) মন্দসৌর জেলার দালাভাড়া গ্রামে সম্প্রতি এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে এক মেয়েকে (daughter) প্রেমের বিয়ে (love marriage) করার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা মারধর করে এবং তার মৃত্যুর শোক পত্রিকা বিতরণ করেছে। এ ঘটনাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং পুরো গ্রামেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় কানহাইয়ালাল নামক এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তার পরিবারের সদস্য রানু হঠাৎ তিন দিন আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। শুরুতে পরিবার তাকে খুঁজে না পেয়ে থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়, রানু পাশের একটি গ্রামে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের বিয়ে করেছেন এবং তার পরিবারের সদস্যরা এই বিয়েকে মেনে নিতে পারেনি।
পুলিশ রানুর প্রেমিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, রানু নিজেই থানায় এসে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে তার বক্তব্য রেকর্ড করেন। তবে, ঘটনাটি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, রানু তার পরিবারের সদস্যদের পরিচয় দিতে অস্বীকার করেন এবং তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেননি। পরে, তার পরিবারের সদস্যরা তাকে মারধর করে এবং গ্রামের মধ্যে এক শোক পত্রিকা বিতরণ করেন, যেখানে রানুর “মৃত্যু” সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়।
এটি একটি অত্যন্ত অমানবিক প্রথার অংশ ছিল, যাকে “গর্নি প্রথা” বলা হয়। এই প্রথায় বিবাহিত বা অবিবাহিত নারীকে তার মৃত্যুর পর জীবিত থাকা সত্ত্বেও শোক অনুষ্ঠান পালন করতে হয়। দালাভাড়ার খারোল পরিবারের সদস্যরা, যারা রানুর পরিবারকেও অন্তর্ভুক্ত, এই প্রথার মাধ্যমে জীবিত রানুকে শোকের মধ্যে রেখে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন। তাদের কাছে এই প্রথা একটি সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও, এর পিছনে যে অমানবিকতা এবং সামাজিক অশান্তি লুকিয়ে রয়েছে তা এখন সামনে এসেছে।
পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, রানু এই ধরনের প্রথার শিকার হয়েছেন এবং তার পরিবারে মারধরের ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। রানুর বয়স ছিল ১৮ বছর ৪ দিন এবং এই বয়সে এমন একটি ঘটনা কেবল তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো গ্রাম এবং সমাজের জন্যও অত্যন্ত দুঃখজনক।
এই ঘটনার পর, স্থানীয় থানায় রানুর পরিবার ক্ষুব্ধ অবস্থায় হাজির হয় এবং তারা পুলিশের কাছে দাবী করে, এমন পরিস্থিতির শিকার হওয়া মেয়েদের জন্য উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের। সামাজিক নীতির পরিবর্তন এবং নারী অধিকারকে সম্মান জানাতে এই ঘটনা গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করা উচিত।
এমনকি রানুর পরিবারের শোক প্রকাশের পরে, তার আত্মপরিচয় এবং স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানাতে সকলকে এগিয়ে আসার প্রয়োজন। সমাজে এই ধরনের পুরনো ও অমানবিক প্রথা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজন এক যৌথ প্রচেষ্টা