পুরী জগন্নাথ মন্দিরে নকল সেবক চক্রের পর্দাফাঁস, ধৃত ১২ জন

পুরী: দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান, পবিত্র জগন্নাথ ধামে (Puri Jagannath Temple) ঘটেছে এক চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনা। মন্দিরের সেবক সেজে ভক্তদের কাছ থেকে টাকা লুঠের অভিযোগে…

Puri  Jagannath temple

পুরী: দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান, পবিত্র জগন্নাথ ধামে (Puri Jagannath Temple) ঘটেছে এক চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনা। মন্দিরের সেবক সেজে ভক্তদের কাছ থেকে টাকা লুঠের অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে ওড়িশা পুলিশ। গোপন সূত্রে খবর পাওয়ার পরই পুলিস বিশেষ অভিযান চালিয়ে এই প্রতারণা চক্রকে ধরতে সক্ষম হয়। ধৃতদের কাছ থেকে ১৪টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২০,০০০ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

পুরীর এক ঊর্ধ্বতন পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, এই প্রতারক দল দীর্ঘদিন ধরে বড়দান্ডা (গ্র্যান্ড রোড) এবং পরিক্রমা রোডে (মন্দিরের আশেপাশে) সক্রিয় ছিল। বিশেষত ওড়িশার বাইরে থেকে আসা পর্যটক ও ভক্তদেরই টার্গেট করত তারা। ঐতিহ্যবাহী সেবায়েতদের পোশাক পরে এবং নিজেদের মন্দিরের সেবক বলে পরিচয় দিয়ে ভক্তদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। তারা দাবি করত, পুজো করিয়ে দেবেন বা বিনামূল্যে জগন্নাথদেবের দর্শনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু এর বিনিময়ে কোনও সরকারি রসিদ না দিয়ে সরাসরি টাকা হাতিয়ে নিত।

   

পুলিস সূত্রে খবর, এই চক্রের সদস্যরা নিজেদের প্রভাবশালী হিসেবে উপস্থাপন করত, যাতে ভক্তরা সহজেই তাদের ফাঁদে পড়ে যায়। অনেক সময় ভক্তদের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে বলত—”দেবতার সেবার জন্য দান করুন” বা “বিশেষ দর্শনের সুযোগ এখনই”। বাস্তবে, কোনও আনুষ্ঠানিক অনুমতি বা মন্দির প্রশাসনের স্বীকৃতি না থাকা সত্ত্বেও, তারা এভাবে প্রতারণা করত।

ওড়িশা পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের অভিযোগ আসছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে একাধিক লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরই তদন্ত শুরু হয়। গোপনে নজরদারি চালিয়ে এবং প্রমাণ সংগ্রহের পর, একাধিক স্থানে হানা দিয়ে এই ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

পুরী পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা মন্দিরের পবিত্রতা, ঐতিহ্য এবং অখণ্ডতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ধরনের প্রতারণা কেবল ভক্তদের ক্ষতি করে না, মন্দিরের ভাবমূর্তিকেও কলঙ্কিত করে। তাই যারা এই ধরনের ঘৃণ্য কার্যকলাপে লিপ্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisements

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বহু পর্যটক এই প্রতারণার শিকার হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন, কিন্তু অনেকে বিষয়টি প্রকাশ করতে লজ্জা বা ভয় পেয়েছেন। এবার বড় আকারে চক্রটি ধরা পড়ায় স্থানীয়রা স্বস্তি পেয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য যে, হিন্দুধর্মে পুরী জগন্নাথ মন্দির চার ধামের একটি হিসেবে গণ্য হয়। সারা বছর দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত এখানে আসেন। এই বিপুল জনসমাগমকেই লক্ষ্য করে প্রতারকরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে রথযাত্রা বা উৎসবের সময় এই ধরনের চক্রের কার্যকলাপ আরও বেড়ে যায় বলে জানা গেছে।

পুলিশ ইতিমধ্যেই ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে। পাশাপাশি, পর্যটকদের সচেতন করতে প্রচারাভিযানও শুরু হয়েছে—যাতে কোনও ভক্ত বা পর্যটককে মন্দির প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কারও হাতে টাকা না দেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

পুলিশ আশা করছে, এই অভিযানের পর মন্দির চত্বরের প্রতারণা কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে এবং ভক্তরা নিরাপদে, কোনও প্রলোভন বা প্রতারণার ভয় ছাড়াই জগন্নাথদেবের দর্শন করতে পারবেন।