নয়াদিল্লি: বিলাসবহুল গাড়ি, কূটনৈতিক নম্বর প্লেট, জাল কূটনৈতিক পাসপোর্ট, বিদেশি মুদ্রা, আর রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে ‘মরফ’ করা ছবি—সব মিলিয়ে যেন সিনেমার চিত্রনাট্য। কিন্তু এ বার এই চিত্রনাট্য বাস্তবে ধরা পড়ল উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে (Fake Embassy of Westarctica)। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (UP STF) একটি ভুয়ো দূতাবাস ফাঁস করে দেয়, যা পরিচালনা করছিলেন এক ব্যক্তি—হর্ষবর্ধন জৈন। এই দূতাবাসটি ‘ওয়েস্টআর্কটিকা’ নামক একটি তথাকথিত মাইক্রোনেশনের বলে দাবি করা হচ্ছিল।
কে এই হর্ষবর্ধন জৈন?
হর্ষবর্ধন নিজেকে ‘ওয়েস্টআর্কটিকা’-র ‘ব্যারন’ হিসাবে পরিচয় দিতেন এবং কূটনৈতিক নম্বর প্লেটযুক্ত বিলাসবহুল গাড়িতে যাতায়াত করতেন। প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে নিজের ছবি ‘মরফ’ করে বিভিন্ন সরকারি ও প্রভাবশালী মহলে প্রভাব বিস্তার করতেন। তদন্তে উঠে এসেছে, তিনি বহুদিন ধরে ভুয়ো কাগজপত্র, বিদেশে কাজের প্রতিশ্রুতি ও শেল কোম্পানির মাধ্যমে হাওয়ালা চক্র চালাচ্ছিলেন।
কীভাবে ফাঁস হল চক্র?
২২ জুলাই, নয়ডা ইউনিটের STF হর্ষবর্ধনকে গ্রেফতার করে। তদন্তে জানা যায়, তিনি গাজিয়াবাদের একটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে ‘ওয়েস্টআর্কটিকা’-র দূতাবাস চালাচ্ছিলেন। ওই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে ৪টি হাই-এন্ড গাড়ি, ১৮টি ভুয়ো কূটনৈতিক নম্বর প্লেট, ১২টি তথাকথিত মাইক্রোনেশনের কূটনৈতিক পাসপোর্ট, ৩৪টি দেশের সিলমোহর সহ নথিপত্র, বিদেশি মুদ্রা এবং ৪৪ লক্ষ নগদ টাকা।
STF-এর সিনিয়র সুপারিন্টেনডেন্ট সুশীল ঘুলে জানান, “হর্ষবর্ধন নিজেকে ‘ওয়েস্টআর্কটিকা’-র রাষ্ট্রদূত পরিচয় দিত এবং এই পরিচয় ব্যবহার করে বহু মানুষকে বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করত। এছাড়া হাওয়ালা চক্রের সঙ্গেও তার যোগসূত্র মিলেছে। আমরা জাল পাসপোর্ট, মন্ত্রকের সিলমোহর সহ একাধিক ভুয়ো নথি উদ্ধার করেছি।”
ওয়েস্টআর্কটিকা কী?
ওয়েস্টআর্কটিকা নামক এই তথাকথিত রাষ্ট্রের জন্ম ২০০১ সালে, এক মার্কিন নৌ-সেনা অফিসার ট্রাভিস ম্যাকহেনরির হাতে। তিনি নিজেকে ‘গ্র্যান্ড ডিউক’ ঘোষণা করে আন্টার্কটিকার ৬,২০,০০০ বর্গমাইল অঞ্চলকে নিজের রাজ্য হিসেবে দাবি করেন। যদিও কোনও রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রসংঘ একে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে ‘ওয়েস্টআর্কটিকা’-র নিজস্ব পতাকা, মুদ্রা ও উপাধি দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তারা মূলত জলবায়ু পরিবর্তন ও আন্টার্কটিকা সংক্রান্ত সচেতনতা ছড়ানোর দাবি করে থাকে।
ভারতের সঙ্গে কী সম্পর্ক?
গাজিয়াবাদে এই ‘কনস্যুলেট জেনারেল’ ২০১৭ সাল থেকে চালু বলে দাবি করে ওয়েস্টআর্কটিকা-র অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট। সেখানে বলা হয়, ‘ব্যারন এইচ ভি জৈন’ প্রতি বছর পাঁচবার করে প্রায় ১,০০০ জনকে খাওয়ানোর মতো সমাজসেবার কাজ করেন। সেই সঙ্গে দূতাবাসের ছবি ও ‘ভাণ্ডারা’-র দৃশ্য পোস্ট করে প্রচার চালানো হয়।
এই ঘটনা ফের প্রমাণ করল, কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত জালিয়াতি কত সহজে প্রচলিত প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে। যেভাবে হর্ষবর্ধন জৈন দীর্ঘদিন ধরে ভুয়ো পরিচয়ে প্রতারণা করে এসেছেন, তা প্রশাসনের জন্য বড় শিক্ষা। STF ইতিমধ্যেই তদন্তে নেমেছে, এই জাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে আর কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।