মাদ্রাসায় জাল টাকার পাহাড়! গ্রেফতার ইমাম

fake-currency-racket-busted-in-madhya-pradesh-madrasa-imam-arrested

মধ্যপ্রদেশের খান্দ্বা জেলার পৈথিয়া গ্রামে একটি মাদ্রাসার ভিতর থেকে জাল টাকার বিশাল চক্র (Fake Currency Racket) উদঘাটন করে পুলিশ রাজ্য জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। গত ২ নভেম্বর, ২০২৫ সালে, এক সুচারু পরিকল্পিত অভিযানের মাধ্যমে পুলিশ মাদ্রাসার ভেতরে প্রবেশ করে এবং সেখানে প্রায় ১৯ থেকে ২০ লক্ষ টাকার জাল ৫০০ টাকার নোট উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় প্রিন্টিং মেশিন, বিশেষ কাগজ, কালি, এবং জাল নোট তৈরির অন্যান্য সরঞ্জাম।

Advertisements

এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার মূল অভিযুক্ত হিসেবে ধরা পড়েছেন মাদ্রাসার ইমাম জুবাইর আনসারী, যিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জুবাইরই এই জাল টাকার র‌্যাকেটের মূল মাথা। তাঁকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাঁর এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকেও আটক করেছে পুলিশ।

   

তদন্তে উঠে এসেছে, জুবাইর আনসারী মূলত বুরহানপুর জেলার হরিপুরা গ্রামের বাসিন্দা। গত কয়েক মাস ধরে তিনি পৈথিয়া গ্রামের ওই মাদ্রাসায় শিক্ষক ও ইমাম হিসেবে কাজ করছিলেন। স্থানীয়দের মতে, তিনি প্রায়ই বিভিন্ন অজুহাতে মাদ্রাসা থেকে বাইরে যেতেন এবং বহু সময় ধরে ফিরে আসতেন না। পুলিশের সন্দেহ, এই সময়েই তিনি জাল নোট তৈরির উপকরণ সংগ্রহ ও বিতরণের কাজ করতেন।

মহারাষ্ট্র পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এই বড় অভিযানের সূত্রপাত। জানা গেছে, কয়েক সপ্তাহ আগে মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও এলাকায় জুবাইর আনসারী ১০ লক্ষ টাকার জাল নোট সঞ্চালন করতে গিয়ে ধরা পড়েন। তাঁর জিজ্ঞাসাবাদের পরই প্রকাশ পায় খান্দ্বার সঙ্গে তাঁর সরাসরি সংযোগ। এরপর মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র পুলিশের যৌথ অভিযানে পৈথিয়া গ্রামের মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে এই বিশাল জাল টাকার নেটওয়ার্কের পর্দাফাঁস হয়।

জাওয়ার থানার পুলিশ আধিকারিক জানান, “আমরা মাদ্রাসার উপরিভাগে অবস্থিত ইমামের ঘরে ঢুকে প্রচুর পরিমাণে জাল ৫০০ টাকার নোট পাই। পাশাপাশি জাল নোট তৈরির সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি অত্যন্ত গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে।”

এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে প্রবল আতঙ্ক ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতার স্থান হিসেবে পরিচিত মাদ্রাসার ভেতর এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনার পর বহু মানুষ বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। তাঁরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে যেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উপর নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়।

Advertisements

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এই জাল টাকার র‌্যাকেটের শিকড় মধ্যপ্রদেশ ছাড়িয়ে মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় এবং এমনকি উত্তর প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার জন্যই এই নেটওয়ার্ক কাজ করছিল বলে অনুমান তদন্তকারীদের। বর্তমানে জুবাইর আনসারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তাঁর কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, জাল নোটের এমন চক্র শুধু আর্থিক ব্যবস্থাকেই নয়, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন লেনদেন ও বিশ্বাসকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

মধ্যপ্রদেশ পুলিশের এই অভিযানকে রাজ্য জুড়ে প্রশংসা করা হচ্ছে। তাঁদের দক্ষতা ও সতর্কতার কারণে একটি বড় অর্থনৈতিক অপরাধের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ভবিষ্যতেও এই ধরনের জাল নোটচক্র ও অর্থনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সার্বিকভাবে, পৈথিয়া গ্রামের এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি জাল টাকার র‌্যাকেট উদঘাটনের ঘটনা নয়, বরং সমাজে সতর্কবার্তা—অপরাধ ধর্মের আড়ালে যতই লুকিয়ে থাকুক, আইনের চোখ ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা এই ধরনের অপরাধ রুখতে একান্তভাবে প্রয়োজন।