দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল (Fake Call Center) একটি বড় ধরনের সাইবার অপরাধী চক্রের পর্দাফাঁস করেছে, যারা ক্রেডিট কার্ডের লিমিট বাড়ানোর নামে কোটি কোটি টাকার জালিয়াতি করছিল। দিল্লির বিকাশপুরী এলাকায় একটি নকল কল সেন্টারের মাধ্যমে এই প্রতারণার কাজ চালানো হচ্ছিল। পুলিশ এই চক্রের ছয়জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
তাদের কাছ থেকে ৪১টি মোবাইল ফোন, একাধিক ল্যাপটপ, রাউটার এবং ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের তথ্য সম্বলিত ডায়েরি উদ্ধার করেছে। এই অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে জাতীয় সাইবার অপরাধ পোর্টালে (এনসিআরপি) ৯৫টিরও বেশি অভিযোগ নথিভুক্ত রয়েছে, যার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকার প্রতারণা করা হয়েছে।
দিল্লি পুলিশের মতে, এই চক্রের সদস্যরা নিজেদের বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে গ্রাহকদের ফোন করত এবং ক্রেডিট কার্ডের লিমিট বাড়ানো বা নতুন পিন তৈরির প্রলোভন দেখাত। এরপর তারা ভুক্তভোগীদের একটি ম্যালওয়্যারযুক্ত এপিকে ফাইল পাঠাত, যা ইনস্টল করার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন এবং এসএমএস-এর উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যেত।
এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারা ক্রেডিট কার্ডের পুরো লিমিট ব্যবহার করে অনলাইনে দামি মোবাইল ফোন কিনত এবং পরে সেগুলো স্থানীয় বাজারে কম দামে বিক্রি করে দিত।এই ঘটনার সূত্রপাত হয় ২১ জুন, ২০২৫-এ, যখন ভুক্তভোগী বীরেন্দ্র কুমার নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন যে তার ক্রেডিট কার্ডের পিন তৈরির নামে ২ লক্ষ ৮১ হাজার টাকার অবৈধ লেনদেন করা হয়েছে।
পুলিশ তদন্তে নেমে কল ডিটেইল, ব্যাঙ্ক লেনদেন, ইউপিআই এবং ই-কমার্স ডেটা বিশ্লেষণ করে। তদন্তে জানা যায়, প্রতারণার মাধ্যমে কেনা মোবাইল ফোনগুলো ফ্লিপকার্টের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনা হয়েছিল। টেকনিক্যাল নজরদারির মাধ্যমে পুলিশ অভিযুক্তদের কাছে পৌঁছায় এবং দিল্লি, হরিয়ানা এবং তেলঙ্গানায় একযোগে অভিযান চালিয়ে ছয়জন অপরাধীকে গ্রেফতার করে।
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের ইন্টেলিজেন্স ফিউশন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক অপারেশনস (আইএফএসও) ইউনিট আরেকটি বড় সাইবার অপরাধী চক্রের পর্দাফাঁস করেছে, যারা এসবিআই এবং অন্যান্য ব্যাঙ্কের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের ডেটা ফাঁস করে প্রতারণা করছিল। এই চক্রের ১৮ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কল সেন্টার কর্মী, সিম কার্ড সরবরাহকারী এবং মূল পরিকল্পনাকারীরা রয়েছেন।
এই গ্যাং দিল্লির কাকরোলা এবং উত্তম নগর এলাকা থেকে কাজ করত এবং সারা দেশে এসবিআই ক্রেডিট কার্ডধারীদের টার্গেট করত। তারা ওটিপি এবং সিভিভি নম্বর সংগ্রহ করে প্রতারণা করত এবং ইজমাইট্রিপ এবং উহু-এর মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে ইলেকট্রনিক গিফট কার্ড কিনে তা ঘরোয়া বিমান টিকিট কেনার জন্য ব্যবহার করত। এই প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ২.৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ তদন্তে আরও জানা গেছে, এই চক্রগুলো গোপন উপায়ে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য (পিআইআই) সংগ্রহ করত, যেমন নাম, নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর এবং কার্ডের আংশিক বিবরণ। এই তথ্যগুলো কার্ড প্রোটেকশন প্ল্যান (সিপিপি) সার্ভিস প্রদানকারী কল সেন্টার থেকে ফাঁস করা হতো।
নির্বাচনী এলাকার ভোটার না হলে কি করণীয়? জানাল কমিশন
দিল্লি পুলিশ এখন গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে এবং এই চক্রে আরও কতজন জড়িত তা খতিয়ে দেখছে। এই ঘটনা সাইবার অপরাধের ক্রমবর্ধমান হুমকির একটি উদাহরণ, যা জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। পুলিশ জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে এবং অজানা নম্বর থেকে আসা কল বা লিঙ্কে ক্লিক না করার জন্য সতর্ক করেছে।