দিল্লির বাওয়ানা শিল্পাঞ্চলে একটি কারখানায় শনিবার একটি বিস্ফোরণের (Factory Blast) ঘটনায় একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এবং আরেকজন সামান্য আহত হয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনাটি বাওয়ানার সেক্টর-১, ডিএসআইআইডিসি-তে অবস্থিত ফ্যাক্টরি নম্বর বি-৮৬-এ ঘটেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বিস্ফোরণটি একটি সিলিন্ডার বা কম্প্রেসারের কারণে হয়েছে।
এই ঘটনায় পাঁচটি দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। মৃত শ্রমিকের নাম নাজিম (৩৫), যিনি উত্তরপ্রদেশের বিজনোর জেলার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যান এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আহত ব্যক্তি অখিলেশ সামান্য আঘাত পেয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।
এই বিস্ফোরণের ঘটনা বাওয়ানা শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। বাওয়ানা দিল্লির একটি প্রধান শিল্প কেন্দ্র, যেখানে প্লাস্টিক, ইলেকট্রনিক্স এবং অন্যান্য উৎপাদন কারখানা রয়েছে। এর আগেও এই এলাকায় আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
গত মে মাসে একটি কারখানায় আগুন লেগে বিস্ফোরণের ফলে ভবন ধসে পড়েছিল, যদিও সেই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এই ঘটনাগুলি শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা মানদণ্ডের অভাব এবং কর্মীদের জন্য ঝুঁকির বিষয়টি সামনে এনেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু হয়। নাজিমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অখিলেশকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, কারখানায় সিলিন্ডার বা কম্প্রেসারের ত্রুটির কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
তবে, বিস্ফোরণের সঠিক কারণ জানতে ফরেনসিক দল তদন্ত করছে। এই ঘটনায় কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠতে পারে।বাওয়ানার শিল্পাঞ্চলে এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়। ২০১৮ সালে একটি কারখানায় বিস্ফোরণে একাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। শিল্প কারখানায় নিরাপত্তা নিয়ম মানা না হওয়া এবং অপর্যাপ্ত পরিদর্শনের কারণে এই ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলো এই ঘটনার পর কারখানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি তুলেছে। এক শ্রমিক নেতা বলেন, “বাওয়ানার কারখানাগুলোতে নিরাপত্তার মান এতটাই নিম্নমানের যে শ্রমিকদের জীবন সবসময় ঝুঁকির মুখে থাকে। সরকার এবং কারখানা মালিকদের এই বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিজেপি নেতারা দিল্লি সরকারের শিল্প নীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারি বলেন, “দিল্লি সরকার শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীন। এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।”
অন্যদিকে, আম আদমি পার্টি (এএপি) সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা এই ঘটনার তদন্ত করছি। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”এই ঘটনা শ্রমিকদের পরিবারের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। নাজিমের পরিবার জানিয়েছে, তিনি তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।
তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো নাজিমের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং আহত অখিলেশের জন্য সঠিক চিকিৎসার দাবি জানিয়েছে।বাওয়ানার এই বিস্ফোরণ শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা মানদণ্ডের অভাব এবং শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকির বিষয়টি আরও একবার সামনে এনেছে।
পুলিশ এবং ফরেনসিক দলের তদন্তের ফলাফলের উপর নির্ভর করে এই ঘটনায় আরও তথ্য প্রকাশ পেতে পারে। এই ঘটনা শিল্প কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে।