বৃহত্তম অর্থনীতি হতে চলেছে — এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছে শীর্ষ সংস্থা আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং (EY)। যদিও আমেরিকার ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সাময়িক ধাক্কা আসতে পারে, তবুও ভারতের দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির গতি ধরে রাখবে বলেই মনে করছে এই সংস্থা।
ভারতের অর্থনীতির এই দ্রুত উত্থানের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে কয়েকটি দিক— জনসংখ্যাগত সুবিধা, প্রযুক্তিগত উন্নতি, ডিজিটাল গ্রহণযোগ্যতা এবং উৎপাদন ও অবকাঠামো খাতে টানা বিনিয়োগ। EY-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ভারত জাপান ও জার্মানিকে টপকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। সে সময় ভারতের জিডিপি পৌঁছতে পারে প্রায় ২৯ থেকে ৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
আমেরিকার শুল্ক চাপ, তবুও এগোবে ভারত
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে আমদানি করা একাধিক পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদে রপ্তানি খাতে এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে EY জানাচ্ছে, ভারতীয় অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বাজার এতটাই শক্তিশালী যে এই ধরনের বাহ্যিক চাপ দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। বরং দেশীয় উৎপাদন ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতির ফলে স্থানীয় শিল্প আরও শক্তিশালী হবে।
জনসংখ্যার শক্তি
ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। EY-র বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তরুণ জনসংখ্যা আগামী দিনে ভারতের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হবে। শ্রমশক্তির সরবরাহ, নতুন উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগ এবং উদীয়মান ভোক্তা বাজার— সব মিলিয়ে ভারত বিশ্ববাজারে এক অনন্য অবস্থান নিতে চলেছে।
প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ইকোনমি
ভারতের আইটি ও স্টার্টআপ খাত ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ডিজিটাল পেমেন্ট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা ও ক্লাউড কম্পিউটিং খাতে দ্রুত উন্নতি দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। EY জানিয়েছে, ২০৩০-এর দশকে ভারতের ডিজিটাল ইকোনমি একাই দেশের মোট জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ দখল করতে পারে।
অবকাঠামো ও উৎপাদনে বিনিয়োগ
সরকারের টানা অবকাঠামো প্রকল্প, নতুন হাইওয়ে, রেল নেটওয়ার্ক এবং সেমিকন্ডাক্টর ও প্রতিরক্ষা উৎপাদনে বিনিয়োগ ভারতের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে। বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত উৎপাদন খাতে এক বড় কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে।
বৈশ্বিক প্রভাব
EY রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০৩৮ সালের মধ্যে ভারত হবে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক শক্তিই নয়, বরং একটি বৈশ্বিক নীতিনির্ধারক দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে ভূরাজনীতি পর্যন্ত নানা বিষয়ে ভারতের ভূমিকা বাড়বে।