২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার (26/11 Mumbai Attacks) অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত তাহাওয়ার রানার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্র। কয়েকদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এই খবর জানিয়েছিলেন যে, রানা ভারতের কাছে প্রত্যর্পিত হতে যাচ্ছেন। তবে, এখন শোনা যাচ্ছে যে রানা তার মানবাধিকার ইস্যুতে একটি চূড়ান্ত আপিল করেছেন, যার ফলে তার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট রানার আপিল খারিজ করার পর তার প্রত্যর্পণের জন্য সব আইনগত বাধা মুছে যাওয়ার পর, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে রানার চূড়ান্ত আপিলের ফলে, তার ভারত ফেরার সময়সূচি কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
২৬ নভেম্বর, ২০০৮ সালে মুম্বাই শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেমন চিত্রাপতি শিবাজী টার্মিনাস (CST) এবং বিশ্বখ্যাত তাজ মহল হোটেলসহ আরও অনেক স্থানে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিল। এই হামলায় ১৬৬ জন মানুষ প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে ২৬ জন বিদেশি নাগরিক ও ২০ জন পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীও ছিলেন। এই হামলার পেছনে ছিল পাকিস্তানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবা, যারা পাকিস্তান থেকে ভারতে হামলা চালানোর জন্য তাদের সদস্যদের পাঠিয়েছিল। এই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাহাওয়ার রানা, যিনি একজন কানাডিয়ান নাগরিক এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত।
রানা আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন, ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল জুরী আদালতে এই হামলায় সাহায্য করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। আদালত তাকে লস্কর-ই-তৈবাকে অস্ত্র সরবরাহ এবং মুম্বাই হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে সাহায্য করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে। এই অপরাধের জন্য তাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তবে বর্তমানে তাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, রানার আইনজীবীরা এখন একটি মানবিক কারণ দেখিয়ে তার দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। যদিও মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট তার আপিল খারিজ করে দিয়েছে, রানার পক্ষ থেকে তার সর্বশেষ আবেদনটি মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। রানার পক্ষ থেকে এই যুক্তি দেওয়া হচ্ছে যে, তার স্বাস্থ্য বা অন্য কোনও শারীরিক বা মানসিক কারণে তাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হলে তা তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এই আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে, তার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া আরও কয়েক সপ্তাহ বিলম্বিত হতে পারে, তবে সূত্র জানিয়েছে যে এটি আইনগত প্রক্রিয়া এবং ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর এর কোনও প্রভাব পড়বে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানান, “আজ আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই যে, আমার প্রশাসন মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার একজন প্রধান ষড়যন্ত্রকারী তথা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধী তাহাওয়ার রানাকে ভারতের কাছে প্রত্যর্পণ করতে অনুমোদন দিয়েছে। তিনি এখন ভারতে ফিরে যাচ্ছেন, যেখানে তাকে বিচার করা হবে।” ট্রাম্প আরও বলেন, “আমরা একসঙ্গে কাজ করব এবং জঙ্গি সন্ত্রাসবাদী হামলাকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের সব শক্তি একত্রিত করব। ভারতে এবং আমেরিকায় সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আমরা একসাথে কাজ করব।”
ট্রাম্পের এই ঘোষণা ভারতের জন্য একটি বড় সাফল্য এবং এটি ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায়। তবে, রানার মানবিক কারণে আপিলের বিষয়টি এটি পরিষ্কার করছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধীদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া কখনোই সরল নয়, এবং এতে কিছু আইনি বাধা অতিক্রম করতে হয়।
রানা, তার অপরাধী কার্যকলাপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের একটি বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লস্কর-ই-তৈবা, যাদের বিরুদ্ধে ২৬/১১ হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে, তারা পাকিস্তানে অবস্থানরত একটি সুপরিচিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীটি ভারত, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানসহ অন্যান্য অঞ্চলে অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী।
মুম্বাই হামলা আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার একটি বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, ভারতের পক্ষ থেকে একাধিক বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই সন্ত্রাসীদের বিচার ও প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হয়েছে। রানার প্রত্যর্পণ, যিনি এই হামলার অন্যতম মূল ব্যক্তি, তার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক নতুন দিক খুলে দেবে।
অবশ্য, রানার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার বিলম্ব আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি কোনও রাজনৈতিক বাধা নয়, বরং কেবল মানবিক এবং আইনগত বিষয়। তবে, আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে এই ধরণের প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় নিতে পারে, যা রাষ্ট্রের মাঝে কিছুটা মতবিরোধ সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া, ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী আইন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়টি বড় ভূমিকা রাখছে, এবং এটি প্রমাণ করছে যে সন্ত্রাসবাদী যদিও তাহাওয়ার রানার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে, তবে এটি ভারতের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। সন্ত্রাসবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একসাথে কাজ করার দৃঢ় সংকল্প ভারত ও আমেরিকা একসঙ্গে গ্রহণ করেছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাবে।