জার্মানির প্রযুক্তি ভারতে আনতে ওয়াডেফুলের সঙ্গে বৈঠক বিদেশমন্ত্রীর

ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর (Jaishankar) এবং জার্মানির বিদেশমন্ত্রী জোহান ডেভিড ওয়াডেফুল আজ নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। এই বৈঠক জার্মান বিদেশমন্ত্রীর…

Jaishankar

ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর (Jaishankar) এবং জার্মানির বিদেশমন্ত্রী জোহান ডেভিড ওয়াডেফুল আজ নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। এই বৈঠক জার্মান বিদেশমন্ত্রীর দুই দিনের ভারত সফরের অংশ, যা ২ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এই সফর ভারত-জার্মানি কৌশলগত অংশীদারিত্বের ২৫ বছর পূর্তি উদযাপনের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ। জোহান ওয়াডেফুল মঙ্গলবার সকালে বেঙ্গালুরুতে পৌঁছান এবং সেখানে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) পরিদর্শন করেন।

   

এরপর তিনি নয়াদিল্লিতে এসে পৌঁছান এবং আজ বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে বৈঠকের পর বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এই বৈঠকের মূল বিষয় ছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক, যার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, নিরাপত্তা, সবুজ শক্তি, ডিজিটাল রূপান্তর এবং বিশ্বব্যাপী শাসনব্যবস্থা। এছাড়াও, ভারত ও জার্মানির মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার জন্য প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং দক্ষ শ্রমশক্তি নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

ওয়াডেফুল তার সফরের আগে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলেন, “ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমাদের সম্পর্ক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে ঘনিষ্ঠ।

আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্প্রসারণে নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন থেকে শুরু করে দক্ষ শ্রমশক্তি নিয়োগ পর্যন্ত বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন যে, ভারত, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে, বিশ্বব্যাপী শাসনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই বৈঠকে ভারত ও জার্মানির মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। ওয়াডেফুল বলেন, “ভারত এই শতাব্দীর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমরা স্বাভাবিক অংশীদার। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আমাদের একসঙ্গে নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষা করতে হবে।” এই বক্তব্য ভারত ও জার্মানির মধ্যে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সহযোগিতার প্রতিফলন ঘটায়।

Advertisements

ভারত ও জার্মানি ২০০০ সালে কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং ২০১১ সালে সরকার প্রধানদের মধ্যে আন্তঃসরকারি পরামর্শ (IGC) চালু করে এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে। এই বছর দুই দেশ এই অংশীদারিত্বের ২৫ বছর উদযাপন করছে। গত মে মাসে জয়শঙ্করের জার্মানি সফরের সময় ওয়াডেফুলের সঙ্গে তিনি বিস্তৃত আলোচনা করেছিলেন, যা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে ছিল।

বৈঠকে ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের সম্ভাবনার উপরও জোর দেওয়া হয়েছে। জার্মানির প্রায় ২০০০টি উদ্যোগ ভারতে বিনিয়োগ করছে, যার মধ্যে মার্সিডিজ-বেঞ্জ এবং এসএপি-এর মতো কোম্পানি উল্লেখযোগ্য।

ওয়াডেফুল বেঙ্গালুরুতে ইসরো পরিদর্শনের সময় মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ভারত ইতিমধ্যেই মহাকাশ কার্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়, এবং আমরা এই ক্ষেত্রে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই।”

এই বৈঠকের মাধ্যমে ভারত ও জার্মানি তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বিশেষ করে, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন দেশের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে, ভারত ও জার্মানির এই সহযোগিতা বিশ্বব্যাপী শাসনব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

৫৬তম জিএসটি বৈঠক শুরু, কোন পণ্য সস্তা, কোনটার দাম বাড়তে পারে?

এই সফর এবং বৈঠক ভারত-জার্মানি সম্পর্কের গভীরতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার প্রতি দুই দেশের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মতে, এই সফর দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।