ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা (India-Pak Mediation) প্রসঙ্গে প্রাক্তন পেন্টাগন কর্মকর্তা ও আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মাইকেল রুবিন এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে, তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “ট্রাম্প নিজেকে এমনভাবে তুলে ধরেন যেন বিশ্বকাপ তিনি একা জিতেছেন, ইন্টারনেট তিনিই আবিষ্কার করেছেন, এমনকি ক্যানসারও তিনি সারিয়েছেন!”
রুবিন বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প সব কিছুর কৃতিত্ব নিজের ঘাড়ে নিতে ভালোবাসেন। তাই ভারতীয়দের উচিত হবে আমেরিকানদের মতো হওয়া—ট্রাম্পের কথা কখনোই আক্ষরিক অর্থে নেওয়া ঠিক নয়।”
এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে, তার প্রশাসনের সময় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গোপন বোঝাপড়া ও উত্তেজনা প্রশমন হয়েছিল মার্কিন হস্তক্ষেপে। যদিও এই দাবি নিয়ে ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা স্বীকার, তবে পরোক্ষে
রুবিন স্পষ্টভাবে বলেন, “যখনই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে, তখন যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত নেপথ্যে কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করে। এটা অস্বাভাবিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য থাকে যুদ্ধ এড়ানো এবং পরিস্থিতিকে নিউক্লিয়ার সংঘর্ষে পরিণত হওয়া থেকে ঠেকানো।”
তিনি আরও বলেন, “ওয়াশিংটন যে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, সেটা একদমই স্বাভাবিক। একইভাবে, এই দুই দেশও প্রায়শই নিজেদের বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে পরস্পরের কাছে পৌঁছে দেয়।”
কূটনৈতিক বাস্তবতা ও রাজনৈতিক কৌতুক
বিশ্লেষকদের মতে, মাইকেল রুবিনের এই মন্তব্যে একদিকে যেমন কূটনৈতিক বাস্তবতা রয়েছে, তেমনই অন্যদিকে রয়েছে মার্কিন রাজনীতির অন্দরের একটি মজার এবং কটাক্ষপূর্ণ দিক। ট্রাম্পের ‘অতি দাবি’ করার প্রবণতা নিয়ে আমেরিকান মিডিয়া ও বিশ্লেষকদের মধ্যে বহুদিন ধরেই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ চলে আসছে।
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের মন্তব্য শুধুমাত্র ট্রাম্পকেই কটাক্ষ নয়, বরং এতে ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানেরও ইঙ্গিত রয়েছে।
ভারতের অবস্থান সবল
ভারত বরাবরই বলে এসেছে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমাধান তারা নিজেরাই করতে চায়, তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সহায়তা থাকলেও, তা কখনোই ‘সরাসরি হস্তক্ষেপ’ বা ‘মধ্যস্থতা’ নয়। রুবিনের বক্তব্য সেই দাবিকেই আরও একবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেয়।
পাকিস্তানের জন্য অস্বস্তির বার্তা
রুবিনের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান এখন অনেকটাই দৃঢ়, এবং পাকিস্তান সেই তুলনায় ক্রমাগত চাপের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ স্পষ্টভাবে বলছে যে, তারা শুধু যুদ্ধ আটকাতে কৌশলগত ভূমিকা পালন করে, কিন্তু পাকিস্তানের দাবির মতো ‘ভারতকে চাপে ফেলতে’ নয়।
মাইকেল রুবিনের বক্তব্যে একদিকে যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্ণনামূলক বাড়াবাড়িকে নিয়ে ব্যঙ্গ রয়েছে, তেমনই রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তব কূটনীতির স্পষ্ট বিশ্লেষণ। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা থাকলে যুক্তরাষ্ট্র বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও কৌশল নির্ধারণের ক্ষমতা থাকে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যেই। এই মন্তব্য আবারও স্পষ্ট করল যে, ভারত তার কূটনৈতিক অবস্থানে শক্ত এবং বিশ্বের বড় শক্তিগুলো সেই অবস্থানকে সম্মান করছে।