সম্প্রতি এক নতুন বিতর্কের ঝড় তুলে, শিল্পপতি গৌতম আদানি (Gautam Adani) এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আমেরিকার (USA) আদালত একটি মামলায় আদানির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার এবং ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। এই ঘটনায় আলোচনায় এসেছে ভারতের একাধিক রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের নাম, বিশেষত অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) শীর্ষ আমলার বিরুদ্ধে।
আদানীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন জর্জ সরোস, ঘুষকাণ্ডে সাফাই বিজেপির
অভিযোগ অনুযায়ী, আদানি গোষ্ঠী (Gautam Adani bribe scam) সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দিয়ে বাজারের থেকে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বরাত পেতে চেষ্টা করেছিল। অভিযোগের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নামও উঠে এসেছে, যেখানে বিশেষভাবে মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির নেতৃত্বাধীন ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই কেলেঙ্কারির কেন্দ্রে রয়েছে সোলার এনার্জি কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (SECI) এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা, যাদের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতাপত্র (MOU) স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
যে অভিযোগ উঠেছে, তার মূল বিষয় হল ১৭৫০ কোটি টাকা ঘুষ প্রদান। আদানি গোষ্ঠী এই টাকা দিয়েছিল, যাতে তারা অন্ধ্রপ্রদেশের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এবং সোলার এনার্জি কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার (SECI) সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সাইন করতে পারে। এই চুক্তির মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠী সৌরবিদ্যুৎ বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণের বাইরে গিয়ে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রি করতে সক্ষম হয়।
তবে, এই অভিযোগে শুধু আদানির নামই নয়, অন্ধ্রপ্রদেশের শীর্ষ আমলারও নাম আসছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, এই কর্মকর্তারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেছেন। যদি এই অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয়, তবে এটি কেবল ভারতের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও বড় ধরনের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করবে।
এই কেলেঙ্কারির মধ্যে জগন্মোহন রেড্ডি এবং তাঁর দল ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এখনও সরাসরি রেড্ডির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, তবে তাঁর সরকারের অন্ধ্রপ্রদেশের এক শীর্ষ আমলার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ওপর ব্যাপক চাপ আসবে। বিশেষ করে, অন্ধ্রপ্রদেশের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর সম্পর্ক এবং এই ধরনের বাণিজ্যিক চুক্তিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধীরা নানা ধরনের প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
অন্যদিকে, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, তাঁদের দল এই ঘুষ কাণ্ডের সাথে কোনোভাবেই যুক্ত নয় এবং তারা পুরো ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। দলের মুখপাত্ররা বলেছেন যে, এই ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
কাসভ বিচার পেলে ইয়াসিন নয় কেন? কাশ্মীরি সন্ত্রাসী নেতার শুনানি নিয়ে সিবিআইকে ‘সুপ্রিম’ খোঁচা
গৌতম আদানি ভারতের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী। তাঁর গোষ্ঠী একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ব্যবসা করে, যার মধ্যে রয়েছে বন্দর, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ, খনি, এবং সৌরশক্তি। তবে, এই প্রথম নয়, যে আদানি গোষ্ঠী বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। এর আগেও আদানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠেছে, বিশেষত তাঁর ব্যবসায়িক অঙ্গীকার এবং সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে। কিছু বছর আগে, আদানি গোষ্ঠী বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে তারা সরকারি প্রকল্পগুলির বরাত পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিল।
এবারের নতুন অভিযোগ আরো জটিল এবং গুরুতর। বিশেষ করে, আমেরিকার আদালতের মধ্যে এই মামলা নিয়ে উত্তেজনা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে এই অভিযোগের প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এই অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি, তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি এই কেলেঙ্কারি তদন্তে নেমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের তদন্তের ফলাফল ভারতের রাজনৈতিক সিস্টেমের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এর পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ করে আমেরিকার আদালতের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তদন্ত চলবে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, বিশেষত আমেরিকার আদালত এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলির কাছে এই কেলেঙ্কারি যথেষ্ট গুরুত্ব পাবে। যদি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে তা ভারতের ব্যবসায়িক ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
কাসভ বিচার পেলে ইয়াসিন নয় কেন? কাশ্মীরি সন্ত্রাসী নেতার শুনানি নিয়ে সিবিআইকে ‘সুপ্রিম’ খোঁচা
এই কেলেঙ্কারি ভারতের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দলগুলি, বিশেষত কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস, ইতিমধ্যেই সরকার এবং আদানি গোষ্ঠীর মধ্যে অস্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। তারা দাবি করছে, এই ধরনের কেলেঙ্কারি ভারতের স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচারের ওপর বড় আঘাত। একইভাবে, আদানির গোষ্ঠী এবং সরকার পক্ষের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে।
এই পরিস্থিতিতে, কীভাবে সরকার এই পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং আদানি গোষ্ঠী কীভাবে নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।