জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া (Kathua encounter) জেলার ঘন জঙ্গলে রবিবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনী একদল জঙ্গির বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে। জানা গেছে, এই জঙ্গিরা সীমান্তের ওপার থেকে ভারতের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করেছে। কর্মকর্তাদের মতে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে। তথ্যে জানা গিয়েছিল যে, পাকিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে সানিয়াল গ্রামের একটি নার্সারির মধ্যে একটি ‘ঢোক’-এ (স্থানীয় ভাষায় একটি ঘেরা জায়গা) জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর পুলিশের বিশেষ অপারেশন গ্রুপ (এসওজি) একটি তল্লাশি অভিযান শুরু করে। তল্লাশির সময় যখন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকায় প্রবেশ করেন, তখন জঙ্গিরা তাদের ওপর অতর্কিতভাবে প্রচণ্ড গুলি চালায়। এরপরই শুরু হয় তুমুল গোলাগুলি। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলছে বলে জানা গেছে।
Also Read | মাওবাদী আইইডি বিস্ফোরণে জখম দুই নিরাপত্তারক্ষী
কাঠুয়া জেলা জম্মু অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যেখানে আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর প্রায়ই অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। সানিয়াল গ্রামের এই নার্সারি এলাকাটি ঘন জঙ্গল দিয়ে ঘেরা, যা জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকার জন্য একটি আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এসে এই এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনী এই তথ্য পাওয়ার পর দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে অভিযান শুরু করে।
এই অভিযানে পুলিশের এসওজি ছাড়াও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও অংশ নিচ্ছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গোলাগুলির তীব্রতা এতটাই বেশি যে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অভিযানে জঙ্গিদের নিষ্ক্রিয় করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
জম্মু ও কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, এই অভিযানে জঙ্গিদের পরিকল্পনা বানচাল করার জন্য গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জঙ্গিদের হাতে ভারী অস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা এই সংঘর্ষকে আরও জটিল করে তুলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই এলাকায় আগেও জঙ্গিদের গতিবিধি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তবে এবারের ঘটনায় জঙ্গিদের সরাসরি আক্রমণ নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযান চলাকালীন স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জঙ্গিদের পালানোর কোনও সুযোগ দেওয়া হবে না।” তিনি আরও বলেন, “এই অভিযানে আমাদের লক্ষ্য শুধু জঙ্গিদের নিষ্ক্রিয় করা নয়, বরং এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা।”
এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন এলাকার বাসিন্দাদের শান্ত থাকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে। গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা নিজেদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
এই ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীরে সীমান্তবর্তী এলাকায় উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির প্রেক্ষাপটে এই ধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টির জন্য সক্রিয় রয়েছে।
অভিযান এখনও চলছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই সংঘর্ষের ফলাফল সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।