সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ (পূর্বে টুইটার), যা বর্তমানে মার্কিন বিলিয়নিয়ার এলন মাস্কের(Elon Musk’s X) মালিকানাধীন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। কর্ণাটক হাইকোর্টে দায়ের করা এই মামলায়, এক্স দাবি করেছে যে সরকার আইনগত প্রক্রিয়া অবহেলা করে অযথা কনটেন্ট সেন্সরশিপ এবং অবৈধ কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করছে, যা তাদের মত অনুযায়ী অবৈধ এবং সাংবিধানিক অধিকার পরিপন্থী।
মামলার মূল অভিযোগ:
এক্স অভিযোগ করেছে, ভারত সরকার তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) আইনের 79(3)(b) ধারার মাধ্যমে অবৈধ কনটেন্ট মুছে ফেলার আদেশ দিয়ে কন্টেন্ট ব্লকিংয়ের জন্য একটি “প্যারালেল সিস্টেম” তৈরি করছে। যা ২০১৫ সালে শ্রীয়া সিঙ্গাল মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নির্ধারিত কাঠামোবদ্ধ আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করছে। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায় অনুযায়ী কনটেন্ট ব্লক করা কেবলমাত্র একটি সুনির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া বা বিচারিক পর্যালোচনার মাধ্যমে হতে পারে।
কী বলছে সরকার:
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক এর মতে, 79(3)(b) ধারা অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে অবৈধ কনটেন্ট মুছে ফেলার জন্য আদালতের নির্দেশ বা সরকারের বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করতে বাধ্য করে। যদি কোনো প্ল্যাটফর্ম ৩৬ ঘন্টার মধ্যে এরূপ কনটেন্ট মুছে না ফেলে, তাহলে তার সেফ হ্যাভেন সুরক্ষা চলে যেতে পারে এবং আইপিসির আওতায় শাস্তিযোগ্য হতে পারে।
এক্স এর প্রতিক্রিয়া:
তবে এক্স এই ব্যাখ্যা নাকচ করে দিয়েছে। এক্স এর দাবি, 79(3)(b) ধারা সরকারকে এককভাবে কনটেন্ট ব্লক করার অধিকার দেয় না। বরং এই ধারাটি দপ্তর ও প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করার কথা বলছে। এক্স অভিযোগ করেছে, সরকার এই আইনকে অপব্যবহার করে “অযৌক্তিক সেন্সরশিপ” চাপিয়ে দিচ্ছে, যা আইনের সুরক্ষা প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কনটেন্ট মুছে ফেলার সুযোগ তৈরি করছে।
69A ধারা এবং আইনি প্রক্রিয়া:
আইটি অ্যাক্টের 69A ধারার আওতায় সরকার জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব বা জনকল্যাণের জন্য যে কোনো ডিজিটাল কনটেন্ট বন্ধ করতে পারে। তবে এই প্রক্রিয়া ২০০৯ সালের ‘আইনসিদ্ধ বিধি এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রক্রিয়া’ অনুসরণ করে, যেখানে কনটেন্ট ব্লক করার আগে একাধিক স্তরের বিচারিক পর্যালোচনা থাকতে হয়।
এক্স এর দাবি সরকার 79(3)(b) ধারার মাধ্যমে এই আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কনটেন্ট মুছে ফেলছে, যা আইনগত সুরক্ষা এবং সঠিক পর্যালোচনাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
সাহযোগ পোর্টালের বিরুদ্ধে অভিযোগ:
আরেকটি বড় বিষয় হলো এক্স সরকারের ‘সহযোগ’ পোর্টালের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে। এই পোর্টালটি ভারতীয় সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টারের (14C) অধীনে তৈরি করা হয়েছিল যাতে সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো সরাসরি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে যোগাযোগ রেখে অবৈধ কনটেন্ট তুলে ফেলার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে।
তবে এক্স এর দাবি, এই পোর্টাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর অযথা চাপ সৃষ্টি করছে এবং কনটেন্ট মুছে ফেলতে বাধ্য করছে, যেটি কোনো আইনি পর্যালোচনা ছাড়া কার্যকর হয়। এক্স যুক্তি দিয়েছে যে, এই পোর্টালটি সরকারী সেন্সরশিপকে আরো শক্তিশালী করার একটি উপায়, যেখানে আদালত বা আইনি নজরদারি ছাড়াই কনটেন্ট ব্লক করা হচ্ছে।
আইনগত সুরক্ষা ও মুক্ত মতপ্রকাশের লড়াই:
এই মামলা ভারতের অনলাইনে মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্স এর অভিযোগ যে, সরকারের এই পদক্ষেপগুলি কেবল কনটেন্ট সেন্সরশিপের অতিরিক্ত ক্ষমতা তৈরি করবে না, বরং ভারতের আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকেও দুর্বল করবে।
এই মামলাটি এখনও আদালতে চলমান থাকলেও, এটি ইন্ডিয়া এবং গোটা বিশ্বের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে, যেখানে অবাধ মতপ্রকাশ এবং অনলাইন নিরাপত্তার সঠিক সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।