নয়াদিল্লি: নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) ভোটার তালিকাকে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ করতে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। দিল্লিতে শুরু হয়েছে দুই দিনের জাতীয় সম্মেলন, যেখানে প্যান-ভারত বিশেষ নিবিড় সংশোধন (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর) কর্মসূচির রূপরেখা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এই অভিযানের লক্ষ্য হলো ভুয়ো, ডুপ্লিকেট এবং মৃত ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, যাতে ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও নির্ভুল ও বিশ্বাসযোগ্য হয়।
এই সম্মেলনে সারা দেশের নির্বাচনী কর্মকর্তারা, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) এবং জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের নেতৃত্বে এই উদ্যোগ ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।এই সম্মেলন, যা ২২ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে, ভোটার তালিকার ত্রুটি সংশোধনের জন্য বিশদ পরিকল্পনা তৈরি করছে।
ভারতের ভোটার তালিকায় বর্তমানে প্রায় ৯৭ কোটি নিবন্ধিত ভোটার রয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে লক্ষ লক্ষ ভুয়ো, ডুপ্লিকেট এবং মৃত ভোটারের নাম থাকতে পারে। নির্বাচন কমিশনের একটি প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিভিন্ন রাজ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভোটার তালিকায় ত্রুটি থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকায় থেকে যাওয়া, একই ব্যক্তির একাধিক নিবন্ধন, এবং অবৈধ পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ভুয়ো ভোটার তৈরি হওয়া এই সমস্যার মধ্যে অন্যতম।
এই অভিযানে আধার কার্ডের সঙ্গে ভোটার আইডি লিঙ্ক করা, বায়োমেট্রিক যাচাই, এবং গ্রাউন্ড-লেভেল ভেরিফিকেশনের মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি ভোটারের নাম সঠিক হওয়া এবং কোনো অযোগ্য ব্যক্তি তালিকায় না থাকা। এটি গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এসআইআর কর্মসূচি ভারতের ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে একযোগে চালানো হবে। এটি নির্বাচন কমিশনের ‘এক ভারত, এক ভোটার তালিকা’ দৃষ্টিভঙ্গির অংশ, যা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রথম প্রস্তাবিত হয়েছিল। এই অভিযানে প্রতিটি জেলায় বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) দ্বারা ঘরে ঘরে যাচাই করা হবে।
এছাড়া, জনসাধারণের জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল এবং হেল্পলাইন চালু করা হবে, যাতে তারা ভোটার তালিকায় ত্রুটি রিপোর্ট করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ দেখেন যে কোনো মৃত আত্মীয়ের নাম এখনও তালিকায় রয়েছে, তাহলে তারা তা জানাতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কমিশন স্থানীয় পঞ্চায়েত, এনজিও এবং নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করবে।
এই অভিযানের পেছনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ। বিগত নির্বাচনগুলোতে ভুয়ো ভোটার এবং ভোট কারচুপির অভিযোগ বারবার উঠেছে। বিশেষ করে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, এবং উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে এই সমস্যা বেশি। সম্প্রতি বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী মহাগঠবন্ধনকে ‘অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষক’ বলে অভিযোগ করেছেন, দাবি করে যে ভুয়ো ভোটাররা তাদের ভোটব্যাঙ্ক।
এই অভিযান তাদের অভিযোগের জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, বিরোধী দলগুলো বলছে, এই অভিযানের মাধ্যমে কিছু সম্প্রদায়ের ভোটারদের ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। এই উদ্বেগ মোকাবিলায় কমিশন বলেছে, “আমরা কোনো ধর্ম, জাতি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কাজ করছি না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো নির্বাচনী তালিকার বিশুদ্ধতা।”