কংগ্রেসের SIR সংক্রান্ত ৮৯ লক্ষ অভিযোগ সব খারিজ নির্বাচন কমিশনে

বিহারে চলতে থাকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Election Commission) প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস তীব্র সমালোচনার সুর চড়িয়েছে। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা পবন খেরা রবিবার (৩১…

Election Commission

বিহারে চলতে থাকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Election Commission) প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস তীব্র সমালোচনার সুর চড়িয়েছে। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা পবন খেরা রবিবার (৩১ আগস্ট ২০২৫) দাবি করেছেন যে, বিহারের নির্বাচনী তালিকা সংশোধনের সময় কংগ্রেসের বুথ লেভেল এজেন্টরা (বিএলএ) ৮৯ লক্ষ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেগুলির সবকটিই খারিজ করে দিয়েছে।

এই অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। পবন খেরার এই বক্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

   

পবন খেরা পটনায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “নির্বাচন কমিশন তাদের ‘সূত্র’ ব্যবহার করে এমন খবর ছড়াচ্ছে যে কোনও রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কিন্তু সত্যিটা হলো, কংগ্রেস একাই ৮৯ লক্ষ অভিযোগ দায়ের করেছে। আমাদের বিএলএ-রা যখন অভিযোগ নিয়ে যায়, তখন তাদের কাছ থেকে অভিযোগ গ্রহণ করা হয় না।

তাদের বলা হয়, আমরা শুধু জনগণের কাছ থেকে অভিযোগ নেব।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, এই প্রক্রিয়ায় বিজেপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ‘যোগসাজশ’ রয়েছে, যা দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু এবং দরিদ্র সম্প্রদায়ের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত।

বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২৪ জুন ২০২৫ থেকে, যার মাধ্যমে নির্বাচনী তালিকা সম্পূর্ণ নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় ৭.৮৯ কোটি ভোটারের মধ্যে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দাবি, এই নামগুলি মৃত, স্থানান্তরিত বা একাধিকবার নথিভুক্ত ভোটারদের।

তবে, কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি এই প্রক্রিয়াকে ‘ভোট চুরি’র একটি প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা দাবি করছে, এই বাদ দেওয়া নামগুলির মধ্যে অনেক জীবিত ব্যক্তির নাম রয়েছে, যারা মূলত দলিত, সংখ্যালঘু এবং দরিদ্র সম্প্রদায়ের।

পবন খেরা আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন যদি সত্যিই তাদের কাজ ঠিকঠাক করত, তাহলে আমাদের ভোটার অধিকার যাত্রায় যেসব মানুষের সঙ্গে আমরা দেখা করেছি, যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তারা কীভাবে জীবিত থাকতে পারেন?”

তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের সমালোচনা করে বলেন, “তাঁর বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি নির্বাচন কমিশনার নন, বরং বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কথা বলছেন।”

Advertisements

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই ইস্যুতে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ নামে একটি ১,৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা শুরু করেছেন, যা বিহারের ২০টিরও বেশি জেলা জুড়ে ১৬ দিন ধরে চলবে। এই যাত্রার লক্ষ্য ভোটারদের অধিকার রক্ষা এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার দাবি জানানো। রাহুল গান্ধী বলেন, “এটি আমাদের গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’-এর লড়াই। নির্বাচন কমিশন বিজেপির পকেটে রয়েছে, এবং আমরা এটি মেনে নেব না।”

নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগের জবাবে বলেছে, ১ আগস্ট প্রকাশিত খসড়া নির্বাচনী তালিকায় কোনও রাজনৈতিক দল নির্ধারিত ফর্মে (ফর্ম ৬ বা ফর্ম ৭) অভিযোগ বা আপত্তি দায়ের করেনি। তারা আরও জানিয়েছে, বিহারে ১.৬ লক্ষ বিএলএ নিয়োগ করা হয়েছে, যার মধ্যে কংগ্রেসের ১৭,৫৪৯ জন এবং আরজেডি-র ৪৭,৫০৬ জন রয়েছে।

তবে, কেবলমাত্র সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ৭৯টি আপত্তি দায়ের করেছে। নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ দায়েরের সুযোগ রয়েছে এবং সমস্ত অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের পরই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে।

বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস এবং আরজেডি, এই প্রক্রিয়াকে বিহারের নির্বাচনের আগে ভোটার দমনের কৌশল হিসেবে দেখছে। তারা অভিযোগ করেছে, এসআইআর-এর নামে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অনেক জীবিত ব্যক্তির নাম রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন ৬৫ লক্ষ বাদ দেওয়া ভোটারের তালিকা জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে, তবে কংগ্রেস দাবি করছে, এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।

দিনহাটা সীমান্তে বিএসএফ–এর হানা, কোটি টাকার সোনা উদ্ধার

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিতর্ক বিহারের আসন্ন নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কংগ্রেসের এই অভিযোগ এবং রাহুল গান্ধীর যাত্রা বিরোধী দলগুলির মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে পারে। তবে, নির্বাচন কমিশনের দাবি, তারা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনী তালিকা তৈরি করছে। এই বিতর্ক কীভাবে বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করে, তা আগামী দিনে দেখার বিষয়।