নির্বাচন কমিশন (Election Commission) আগামীকাল, রবিবার, বিকেল ৩টায় নয়াদিল্লির ন্যাশনাল মিডিয়া সেন্টারে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে। এই সম্মেলনটি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলী, বিশেষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভোট চুরি’ অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া শুরুর পর এটি হবে নির্বাচন কমিশনের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন। এই সাংবাদিক সম্মেলনটি বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, বিহারের এসআইআর প্রক্রিয়া এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় বড় আকারে ‘ভোট চুরি’ হয়েছে। গত ১লা অগস্ট এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে এই ভোট চুরির শতভাগ প্রমাণ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন এই কাজে সরাসরি জড়িত এবং তারা এটি বিজেপির স্বার্থে করছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে ১,০০,২৫০ ভোটের হেরফের হয়েছে বলে কংগ্রেসের গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাহুল গান্ধী এই অভিযোগকে ‘নির্বাচনের কোরিওগ্রাফি’ বলে সমালোচনা করেছেন এবং দাবি করেছেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাহুল গান্ধী বিহারে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শুরু করেছেন, যা আগামীকাল সাসারাম থেকে শুরু হবে। তিনি জনগণকে এই ‘জন আন্দোলনে’ যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কংগ্রেস দাবি করেছে, এই যাত্রার মাধ্যমে তারা ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’ নীতির জন্য লড়াই করবে এবং নির্বাচন কমিশনকে বিজেপির ‘বগি’ হতে দেবে না।
নির্বাচন কমিশন গত ২৪শে জুন বিহারে ভোটার তালিকার এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু করে, যা ২০০৩ সালের পর এই রাজ্যে প্রথম। এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য ছিল নগরায়ণ, যুব ভোটার নথিভুক্তকরণ এবং অভিবাসনের কারণে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। বুথ লেভেল অফিসারদের মাধ্যমে ঘরে ঘরে যাচাইকরণ করা হয়েছে।
১লা অগস্ট প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় ৭.২৪ কোটি ভোটারের নাম রয়েছে, যা ২৪শে জুনের ৭.৯ কোটি থেকে ৬৫.৬ লাখ কম। এই হ্রাসের মধ্যে রয়েছে ২২ লাখ মৃত ভোটার, ৩৬ লাখ স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত বা অনুপস্থিত ভোটার, ৭ লাখ একাধিক জায়গায় নথিভুক্ত ভোটার এবং যারা নথিভুক্তকরণ ফর্ম জমা দেননি।
এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এই প্রক্রিয়াকে ‘বৈষম্যমূলক’ এবং ‘অন্যায়’ বলে সমালোচনা করেছে। তারা দাবি করেছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, যা বিজেপির স্বার্থে করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে, এবং আদালত এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জেলাওয়ারি বাদ পড়া ভোটারদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানিয়েছে, ভোটার তালিকা স্বচ্ছ এবং কোনও অনিয়ম হয়নি। কমিশনের মতে, এসআইআর প্রক্রিয়া ভোটার তালিকাকে আরও বিশুদ্ধ করেছে এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে।
১০,৫৭০টি দাবি ও আপত্তির মধ্যে মাত্র ১২৭টি ভোটারদের কাছ থেকে এসেছে, যা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার ইঙ্গিত দেয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে, কমিশন বাদ পড়া ৬৫ লাখ ভোটারের তালিকা জেলাওয়ারি প্রকাশ করবে এবং আধারকে পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণ করবে।
এই সাংবাদিক সম্মেলনটি বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। রাহুল গান্ধীর অভিযোগ এবং তাঁর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তুলেছে।
মাত্র 5,899 টাকায় 12GB ব়্যাম ও 5000mAh ব্যাটারি ফোন, দেখুন বিস্তারিত
বিজেপি এই অভিযোগকে ‘হতাশার কৌশল’ বলে সমালোচনা করেছে। নির্বাচন কমিশন এই সম্মেলনে এই অভিযোগের জবাব দেবে এবং ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।