যতদিন যাচ্ছে ততোই দুর্বিসহ হয়ে উঠছে দিল্লির (Delhi Pollution) অবস্থা। বর্তমানে সেখানকার বাতাসের একিউআই ৪০৬ পেরিয়ে যাওয়াতে তৈরী হয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। রবিবার সন্ধ্যায় সেখানে বাতাসের গুণগত মান ছিল ৪৫৫। যা সোমবার সকালে আরও অনেকটা বেড়ে গেছে। সোমবার সকাল ৯টায় রাজধানীর বায়ুর গুণগত মান (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই) পৌঁছেছে ৪৮৫-এ।
বলা যায়, দিল্লিতে পারদপতনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে বায়ুদূষণও। বায়ুদূষণ মোকাবিলায় দিল্লি সরকার আট দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে। কিন্তু তারপরেও দিল্লির বাসিন্দারা এবারে সবচেয়ে ভয়াবহ বায়ুদূষণ অনুভব করছেন। কয়েকদিন ধরে দিল্লির আকাশে ঘন ধোঁয়াশা ছড়িয়ে রয়েছে, যা রাজধানী শহরের বাসিন্দাদের জন্য একটি বড় দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
সপ্তাহের শুরুতে ডিজেলের দাম বেড়ে দাঁড়াল ৯২.৪২টাকা, কলকাতায় পেট্রোলের দাম কত?
এর মধ্যে দিল্লি প্রশাসন দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বহনকারী ট্রাক ছাড়া অন্যান্য ভারী যানবাহনকে দিল্লিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আধুনিক ইঞ্জিনবিশিষ্ট গাড়ি ছাড়া ছোট গাড়ির ক্ষেত্রেও প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাছাড়া নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে দূষণ আরও বাড়ানোর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
ওদিকে স্কুলগুলির পঠনপাঠনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণি বাদে অন্য সমস্ত শ্রেণির পাঠদান অনলাইনে করতে বলা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে পড়াশোনা চালালে রাস্তায় গাড়ির চলাচল কিছুটা হলেও কমবে। ধোঁয়ার কারণে দিনের বেলা দৃশ্যমানতা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। যার জন্য দেরিতে চলছে ট্রেন এবং বিমান। যাত্রীদের অতিরিক্ত সময় নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রাজ্যে উত্তুরে হওয়ার দাপটের মাঝে জাঁকিয়ে পড়বে শীত, তাপমাত্রা কমে গড়বে রেকর্ড!
পরিস্থিতি সামলাতে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দিল্লি সরকার ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’ (গ্র্যাপ-৩) চালু করেছে। এছাড়া দিল্লির বাসিন্দাদের জন্য বেশ কিছু স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ খুব প্রয়োজন না পড়লে বাড়ির বাইরে না বের হন। বিশেষত যাঁরা শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, যদি দূষণের মাত্রা এভাবেই বাড়তে থাকে তবে এটি শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট বা শারীরিক সমস্যার কারণ হবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে মানুষের জীবনযাত্রায় আরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রসঙ্গত, দিল্লির বায়ুদূষণের সমস্যা নতুন কিছু নয়। প্রতি বছর শীতকালে বিশেষত পারদপতন এবং কৃষি পোড়ানোর কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা অনেকটা বেড়ে যায়।
প্রায় ২২ ঘণ্টা লেট ট্রেন, চরম যাত্রী ভোগান্তির জন্য দুঃখপ্রকাশ রেলের
এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, এই সমস্যা শুধু শীতকালীন পরিবেশগত অবস্থার উপর নির্ভরশীল নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত অবহেলা এবং শিল্পোন্নত কার্যক্রমের ফলস্বরূপ এটি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। তবে সোমবার সকালে আরব সাগরের উপকূলবর্তী মুম্বই শহরেও ধোঁয়াশা দেখা গিয়েছে।
মুম্বইয়ের বায়ুর গুণগত মান ছিল ১৭৯, যা এক ধরনের ‘মাঝারি’ দূষণ নির্দেশ করে। তবে মুম্বাইয়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এমন ধোঁয়াশা তারা শেষ কবে দেখেছিল তা তাদের নিজেদের মনে নেই। বরং দীর্ঘদিন পর তারা এমন ধোঁয়াশা দেখছেন। এদিকে শহরের বাণিজ্যিক এবং শিল্প কেন্দ্র হিসেবে মুম্বইয়ে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
তীব্র ভারত বিরোধিতা, কলকাতা বইমেলায় নাম বাদ বাংলাদেশের
দিল্লি এবং মুম্বইয়ের মতো শহরগুলোতে বায়ুদূষণ দিন দিন বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছছে। রাজধানীর মতো এমন শহরে দূষণের মাত্রা কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য শুধুমাত্র প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয় বরং জনগণের সচেতনতা এবং অংশগ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।