Money Laundering Case: অর্থপাচার মামলায় সিপিআইএম সাংসদকে তলব ইডির

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) করুভান্নুর সার্ভিস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে কথিত অনিয়মের সঙ্গে জড়িত একটি মানি লন্ডারিং মামলায় (Money Laundering Case) সিপিআই(এম) এমপি কে রাধাকৃষ্ণনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব…

short-samachar

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) করুভান্নুর সার্ভিস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে কথিত অনিয়মের সঙ্গে জড়িত একটি মানি লন্ডারিং মামলায় (Money Laundering Case) সিপিআই(এম) এমপি কে রাধাকৃষ্ণনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে। আলাথুরের ৬০ বছর বয়সী এই সাংসদকে আজ, শনিবার ইডির সামনে হাজির হয়ে প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ)-এর অধীনে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করতে বলা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এই ঘটনা কেরলের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে।

   

ইডি সূত্রে জানা গেছে, এই মানি লন্ডারিং মামলার সূত্রপাত হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই মাসে ত্রিশূরে কেরল পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের দায়ের করা কমপক্ষে ১৬টি এফআইআর থেকে। সিপিআই(এম)-নিয়ন্ত্রিত করুভান্নুর ব্যাঙ্কে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। ইডির তদন্তে দাবি করা হয়েছে যে, ব্যাঙ্ক থেকে একই সম্পত্তির বিরুদ্ধে একাধিকবার “জাল” ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে, যা সমবায় সমিতির সদস্যদের অজান্তেই করা হয়েছিল। এছাড়াও, বেনামি ঋণ দেওয়া হয়েছে অ-সদস্যদের কাছে, যেখানে সম্পত্তির মূল্যায়ন অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে। এই ঋণের টাকা অভিযুক্তরা হাতিয়ে নিয়ে “লন্ডারিং” করেছে বলে ইডি অভিযোগ করেছে।

কে রাধাকৃষ্ণন বর্তমানে আলাথুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ এবং সিপিআই(এম)-এর একজন প্রভাবশালী নেতা। তিনি যখন ত্রিশূর জেলা সেক্রেটারি ছিলেন, তখনই এই কেলেঙ্কারি শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। ইডির দাবি, দলের জেলা পর্যায়ের নেতা ও ব্যাঙ্ক পরিচালনা কমিটির সদস্যদের নির্দেশে এই আর্থিক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে। রাধাকৃষ্ণনকে তলব করার মধ্যে দিয়ে ইডি এই মামলায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে চাইছে। তবে, রাধাকৃষ্ণন শুক্রবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “ইডির নোটিশে করুভান্নুর মামলার কথা উল্লেখ নেই। আমাকে আমার সম্পত্তি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং জমির বিবরণ জমা দিতে বলা হয়েছে। পার্লামেন্টের অধিবেশন চলায় আমি এখন হাজির হতে পারব না। অধিবেশন শেষে আমি ইডির সামনে যাব।”

CPI(M) MP K Radhakrishnan in Karuvannur Cooperative Bank Money Laundering Case
সিপিআই(এম) এমপি কে রাধাকৃষ্ণন

রাধাকৃষ্ণন অভিযোগ করেছেন যে, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলি, যেমন ইডি, কেন্দ্র সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দমন করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, “শুধু কেরলে নয়, সারা ভারতেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আমি যেকোনো তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।” সিপিআই(এম) নেতৃত্বও এই ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছে। দলের একাংশের মতে, এটি কেরলে বামফ্রন্টের প্রভাব কমানোর একটি চেষ্টা।

করুভান্নুর সার্ভিস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে এই কেলেঙ্কারি ২০১০ সাল থেকে শুরু হয়েছিল বলে ইডির তদন্তে উঠে এসেছে। ২০২৩ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ইডি এই মামলায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করেছিল এবং ১১৭ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল। এর আগে, সিপিআই(এম)-এর প্রাক্তন মন্ত্রী এসি মইদিন, প্রাক্তন এমপি পিকে বিজু এবং জেলা সেক্রেটারি এমএম বর্গিসের মতো নেতাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ইডির অভিযোগ, দলের নির্দেশে গরিব সদস্যদের সম্পত্তি বন্ধক রেখে জাল ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং সেই টাকা দলের তহবিলে স্থানান্তরিত হয়েছে।

রাধাকৃষ্ণনের এই তলব কেরলের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সিপিআই(এম) এই পদক্ষেপকে বিজেপি সরকারের “রাজনৈতিক হয়রানি” হিসেবে দেখছে, যেখানে বিরোধীরা মনে করছে এটি দলের দুর্নীতির প্রমাণ। তদন্ত যদি সঠিকভাবে এগোয়, তবে আরও শীর্ষ নেতার নাম জড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই মামলা পিএমএলএ আদালতে পৌঁছলে এর রাজনৈতিক ও আইনি প্রভাব গভীর হবে।

করুভান্নুর ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি কেরলের সমবায় খাতে দীর্ঘদিনের দুর্নীতির একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। রাধাকৃষ্ণনের মতো একজন প্রভাবশালী নেতাকে তলব করা এই মামলায় নতুন মোড় এনেছে। তিনি ইডির সামনে হাজির হলে কী তথ্য প্রকাশ পায়, তা এখনও দেখার বিষয়। তবে এটি স্পষ্ট যে, এই ঘটনা কেরলের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।