ফের একবার দিল্লির রাজনীতিতে চাঞ্চল্য। রাজধানীর রাজপথ থেকে অলিগলিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ইডির হানা। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং আম আদমি পার্টির (আপ) অন্যতম মুখ্য নেতা সৌরভ ভরদ্বাজের বাড়িতে আজ সকাল থেকেই তল্লাশি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
শুধু তাই নয়, সৌরভ ভরদ্বাজের বাড়ি ছাড়াও দিল্লির আরও ১৩টি জায়গায় একযোগে অভিযান শুরু করেছে ইডির আধিকারিকেরা। অভিযোগ, হাসপাতাল নির্মাণে অর্থ তছরুপ এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত একাধিক লেনদেনের যোগসূত্র খুঁজতেই এই অভিযান।
সোমবার সকাল থেকেই দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে ইডি-র দল অভিযান চালাতে নামে। সৌরভ ভরদ্বাজের দক্ষিণ দিল্লির বাড়ি ঘিরে ফেলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। এরপর ভিতরে প্রবেশ করেন ইডি আধিকারিকেরা। প্রায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চলছে। ইডি সূত্রের খবর, হাসপাতাল তৈরির জন্য বরাদ্দ অর্থের ব্যবহার নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। সেই অর্থের একাংশ অন্যত্র সরানো হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই দুর্নীতির নেপথ্যে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত একাধিক আপ নেতা।
উল্লেখ্য, সৌরভ ভরদ্বাজ দিল্লির প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আপ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মুখ তিনি। কেজরিওয়ালের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। এর আগে মদ নীতি মামলায় উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া ও মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের গ্রেপ্তারির পর থেকেই আপ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তদন্তে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। এবার সেই ধারাবাহিকতায় সৌরভ ভরদ্বাজের নাম জড়ানোয় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য আরও বেড়েছে।
ইডি সূত্রে খবর, তল্লাশির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত প্রমাণ সংগ্রহ। বিশেষত হাসপাতাল প্রকল্পের আর্থিক নথি, নগদ টাকা, সম্পত্তির ডকুমেন্টস ইত্যাদি খুঁজে দেখছেন তদন্তকারীরা। জানা গিয়েছে, শুধু দিল্লিতেই নয়, দেশের অন্যত্রও এই তদন্তের সূত্র ছড়িয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে আম আদমি পার্টি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। দলের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশেই বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ইডিকে ব্যবহার করছে। আপের দাবি, দিল্লিতে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নয়নের জন্য যে কাজ হয়েছে, তা ঢাকতে চাইছে বিজেপি। সৌরভ ভরদ্বাজ নিজেও প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন— “আমার কাছে লুকোনোর কিছু নেই। সব নথি স্বচ্ছ। কেন্দ্রীয় সরকার ভয় দেখাতে চাইছে, কিন্তু আমরা মাথা নোয়াব না।”
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে দিল্লিতে বিজেপি-আপ লড়াই নতুন মাত্রা পাচ্ছে। ইডি-র এই পদক্ষেপ নিছক তদন্ত নাকি এর পিছনে রাজনৈতিক বার্তা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ এর আগেও বহুবার নির্বাচন-পূর্ব সময়ে আপ নেতাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থার এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমরা কেবলমাত্র প্রমাণ ও অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ করছি। কোথাও দুর্নীতির প্রমাণ মিললে আমরা তা অনুসন্ধান করব। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।” যদিও বিরোধী শিবির মানতে নারাজ। কংগ্রেস এবং আপ দুই শিবিরই কেন্দ্রকে একযোগে আক্রমণ করেছে।
রাজধানীতে এই অভিযান ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একাংশ মনে করছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া জরুরি। অন্যদিকে অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিরোধী নেতাদের কোণঠাসা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, সৌরভ ভরদ্বাজের বাড়িতে ইডির এই তল্লাশি দিল্লির রাজনৈতিক আবহাওয়া আরও উত্তপ্ত করে তুলল। তদন্তের ফলাফল সামনে আসতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে ইতিমধ্যেই রাজনীতির অঙ্গনে এই হানা এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।