‘সংবিধান লঙ্ঘনের পথে’, ইডির ভূমিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন শীর্ষ আদালত

Supreme Court: কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি আবারও সংবাদের শিরোনামে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ইডি তার…

gavai told in waqf-hearing

Supreme Court: কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি আবারও সংবাদের শিরোনামে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ইডি তার আইনসঙ্গত এক্তিয়ারের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাঁর মতে, এই সংস্থার এমন আচরণ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকেও আঘাত করছে।

এই মন্তব্য এসেছে এক গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানির সময়। মামলাটি তামিলনাড়ু স্টেট মার্কেটিং কর্পোরেশন বা TASMAC-কে ঘিরে। ইডি-র অভিযোগ, তামিলনাড়ুর এই সরকারি সংস্থা ১,০০০ কোটি টাকার এক দুর্নীতিতে জড়িত। তাদের দাবি, সংস্থাটি বিভিন্ন ডিস্টিলারি থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মদ সংগ্রহ করেছে, কিন্তু তার হিসেব নেই। ফলে এই আর্থিক লেনদেন কালো টাকার আওতায় পড়ে এবং অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন (PMLA)-এর অধীনে তদন্ত শুরু করে ইডি।

   

তামিলনাড়ু সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, রাজ্যের ডিরেক্টরেট অফ ভিজিল্যান্স অ্যান্ড অ্যান্টি করাপশন শাখা (DVAC) ইতিমধ্যেই ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মদের আউটলেট সংক্রান্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৪১টি এফআইআর দায়ের করেছে। এর ফলে তদন্ত চলছে রাজ্য স্তরেই। সেই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি যদি একই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে, তবে তা দেশের ফেডারেল কাঠামোর উপর হস্তক্ষেপ বলেই গণ্য হবে।

মাদ্রাজ হাইকোর্ট অবশ্য ইডি-কে তদন্ত চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছিল ২৩ এপ্রিল। তবে এই নির্দেশের বিরোধিতা করে তামিলনাড়ু সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। আদালতে তাদের সওয়াল ছিল, TASMAC একটি রাজ্য নিয়ন্ত্রিত সংস্থা এবং তার উপর কেন্দ্রীয় সংস্থার এমন তদন্ত আইনসঙ্গত নয়। ইডি রাজ্যের অধিকার অতিক্রম করে বেআইনি তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, “এমন হলে তো আগামী দিনে কোনও রাজ্য সংস্থার উপরও কেন্দ্রীয় সংস্থা নিজের মতো করে তদন্ত চালাতে পারবে। এটা আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।” তিনি আরও বলেন, “ইডি নিজের এক্তিয়ার বুঝে কাজ করুক, তা না হলে আইন ও সংবিধানের ভারসাম্য নষ্ট হবে।”

Advertisements

এটাই প্রথম নয়, ইডি-র বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিকবার এক্তিয়ার ছাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। আম আদমি পার্টির নেতাদের গ্রেপ্তারের সময়েও সুপ্রিম কোর্ট ইডি-র তদন্ত পদ্ধতি ও গ্রেপ্তারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এমনকি, PMLA আইন নিয়েও বিচারপতিরা একাধিকবার বলেছেন যে এটি স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত নয় এবং এতে নাগরিকদের অধিকার হরণের আশঙ্কা থাকে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে, ইডি-র নিরপেক্ষতা ও কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের প্রশ্ন আবারও আলোচনায় এসেছে। রাজ্য বনাম কেন্দ্রের ক্ষমতা ও সীমা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার ভূমিকা কতটা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হওয়া উচিত, তা নিয়েও নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে।

বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন, তবে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কার্যপদ্ধতি নিয়ে দেশজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে ইডি-র ভূমিকা ও আইনগত অবস্থান কীভাবে চিহ্নিত হয় এবং তা রাজ্য ও কেন্দ্রের সম্পর্ককে কোন পথে নিয়ে যায়।