মনোজ পন্থকে পাঁচ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের

কলকাতা: রাজ্যের ভোটার তালিকায় (ECI) ভুয়ো নাম তোলার অভিযোগ ঘিরে ফের কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাত তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে সহজে কোনও শাস্তিমূলক…

মনোজ পন্থকে পাঁচ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের

কলকাতা: রাজ্যের ভোটার তালিকায় (ECI) ভুয়ো নাম তোলার অভিযোগ ঘিরে ফের কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাত তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে সহজে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেবেন না তিনি। তবে বুধবার পরিস্থিতি বদলে গেল। দিল্লিতে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে তলব করে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিল—পাঁচজন অভিযুক্ত আধিকারিকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তা অবশ্যই আগামী ২১ অগস্ট-এর মধ্যে।

সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগের তালিকায় রয়েছেন বারুইপুর পূর্বের ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO) দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী, ওই কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (AERO) তথাগত মণ্ডল, ময়নার ERO বিপ্লব সরকার, ওই কেন্দ্রের AERO সুদীপ্ত দাস এবং এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সুরজিৎ হালদার। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—ভোটার তালিকা তৈরির সময় সরকারি আইডি শেয়ার করেছেন অস্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে, যার ফলে ভুয়ো নাম যুক্ত হয়েছে।

   

নির্বাচন কমিশন প্রথমেই রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল—অভিযুক্ত অফিসারদের সাসপেন্ড করতে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে। তবে রাজ্যের তরফে গত সোমবার জানানো হয়—শুধুমাত্র সুদীপ্ত দাস ও সুরজিৎ হালদারকে কমিশনের কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে এফআইআর হয়নি বা সাসপেনশন হয়নি। চিঠিতে আরও যুক্তি দেওয়া হয়, সরকারি আধিকারিকদের প্রচুর কাজের চাপ থাকায়, তাঁরা অনেক সময় কর্মীদের সঙ্গে অফিসিয়াল আইডি শেয়ার করে থাকেন।

বুধবার দিল্লিতে কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠকে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে প্রশ্ন করা হয়—কেন কমিশনের নির্দেশ কার্যকর হয়নি? চার অফিসারের বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করতে হয় তাঁকে। বৈঠকে আইনি এক্তিয়ার (Legal Jurisdiction) নিয়েও আলোচনা হয়। কমিশনের স্পষ্ট বার্তা—এই নির্দেশ সম্পূর্ণ আইনি সীমার মধ্যেই এবং SIR (Special Summary Revision) প্রক্রিয়া প্রতিটি রাজ্যে নিরপেক্ষভাবে বাস্তবায়ন করতেই হবে।

Advertisements

এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন—নির্বাচন বিধি এখনও কার্যকর না হতেই, রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার আছে কি না। কিন্তু কমিশন বুধবার বুঝিয়ে দিয়েছে, সংবিধান ও প্রযোজ্য আইনের আওতায় তাদের এই ক্ষমতা আছে, এবং ভোটার তালিকা স্বচ্ছ রাখতে তারা কোনও প্রকার গাফিলতি বরদাস্ত করবে না।

২১ অগস্টের ডেডলাইন ঘিরে এখন প্রশাসনিক অন্দরে চাপ বাড়ছে। যদি ওই সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কমিশনের নির্দেশ মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে সরাসরি কমিশন হস্তক্ষেপ করে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

সংক্ষেপে, ভুয়ো ভোটার তালিকা কাণ্ডে পাঁচ সরকারি কর্মী ও আধিকারিককে কেন্দ্র করে রাজ্য ও কমিশনের দ্বন্দ্ব এখন চরমে। সময়সীমা ঘনিয়ে আসায়, পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষ।