EC to Curb Fake Voters: ভুয়ো ভোটার রুখতে এবং ভোটদানের প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করতে বড় পদক্ষেপ নিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এবার থেকে আর খাতায়-কলমে হিসেব কষে নয়, বাস্তবে রিয়েল টাইমে ভোটদানের হার প্রকাশ করবে কমিশন। পুরো প্রক্রিয়াটিই প্রযুক্তিনির্ভর হবে, যার ফলে ভুয়ো ভোটার চিহ্নিতকরণ অনেকটাই সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ECINET অ্যাপে রিয়েল টাইম আপডেট
নির্বাচন কমিশনের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, নির্বাচনের দিন প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর প্রিসাইডিং অফিসারদের ভোটদানের হার আপলোড করতে হবে ECINET অ্যাপে। ফলে দেশজুড়ে ভোট কতটা পড়ছে, কোন বুথে কী গতি, সেই সব তথ্য একবারে চোখের সামনে চলে আসবে।
নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিটি কেন্দ্রের ভিত্তিতে বিস্তারিত ভোটদানের হার প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। এই তথ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে সরাসরি দেখা যাবে। এতে করে আগের মতো দেরি করে হিসেব প্রকাশ বা কারচুপি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Form 17C-র নিয়মে বদল নয়
তবে প্রিসাইডিং অফিসারদের দ্বারা ভোটের পর প্রতিটি বুথে তৈরি করা Form 17C দেওয়ার পুরনো প্রথায় কোনও বদল হচ্ছে না। এই ফর্মে মোট ভোটদানের সংখ্যা এবং বিস্তারিত তথ্য থাকে, যা পোলিং এজেন্টদের হাতে দেওয়া হয়।
নতুন ব্যবস্থায় যদিও রিয়েল টাইমে তথ্য পাওয়া যাবে, তবুও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে 17C-র প্রমাণ এখনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছে কমিশন।
বিরোধীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বড় পদক্ষেপ
গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই ভোটদানের হার প্রকাশে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের পরেও ভোটদানের শেষ তথ্য প্রকাশে দেরি, অস্বচ্ছতা এবং হঠাৎ করে হার বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল কংগ্রেস, তৃণমূল সহ একাধিক দল।
বিশেষ করে কিছু কেন্দ্রে ভোট শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরও ভোটদানের শেষ হার না জানানো নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক মহল। অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন, ভোটার তালিকা কারচুপি এবং ভুয়ো ভোটের সুযোগ করে দিতেই ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের এই নতুন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্লেষক মহল। তাঁদের মতে, রিয়েল টাইমে তথ্য প্রকাশের ফলে একদিকে যেমন ভোটারদের আস্থা ফিরবে, তেমনই রাজনৈতিক দলগুলিও এখন বুথভিত্তিক নজরদারির সুবিধা পাবে।
ভুয়ো ভোটার চিহ্নিতকরণে প্রযুক্তির বড় ভূমিকা
ভুয়ো ভোটারদের দমন করাই এই নতুন ব্যবস্থার অন্যতম মূল লক্ষ্য। যদি কোনও কেন্দ্রে ভোটদানের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় বা অন্য বুথের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা নজরে আসবে।
কমিশন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে— চিহ্নিত করতে পারবে কোন বুথে সন্দেহজনক হারে ভোট পড়ছে এবং সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ, পোলিং স্টাফের রিপোর্ট বা অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে। ভোটদানে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরাতে এই প্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক দল, সাধারণ ভোটার ও পর্যবেক্ষকদের মধ্যে স্বচ্ছতা বাড়লে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ বা বিতর্কের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে— এমনটাই আশা করছে কমিশন। আগামী দিনে বাস্তবায়নের ফলে এই নতুন ব্যবস্থার কার্যকারিতা কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।