‘ভোট চুরি’ প্রমাণ চাই, রাহুলের দাবি খারিজ করল নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশন অফ ইন্ডিয়া (ইসি) বৃহস্পতিবার লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) ও ইন্ডিয়া জোটের একাধিক দলের উদ্দেশে তীব্র ভাষায় জবাব দিল। সম্প্রতি বিরোধী…

EC Cites 1951 ‘One Person, One Vote’ Law, Slams Rahul Gandhi and Opposition Over ‘Vote Chori’ Remark, Demands Proof

নির্বাচন কমিশন অফ ইন্ডিয়া (ইসি) বৃহস্পতিবার লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) ও ইন্ডিয়া জোটের একাধিক দলের উদ্দেশে তীব্র ভাষায় জবাব দিল। সম্প্রতি বিরোধী শিবির বারবার “ভোট চুরি” শব্দবন্ধ ব্যবহার করছে। ইসির বক্তব্য, এই ধরনের “নোংরা মন্তব্য” সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা। কমিশনের দাবি, এ ধরনের মন্তব্যের লক্ষ্য একটাই— সাধারণ ভোটারের মনে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করা।

ইসির পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, “ভোট চুরি”র মতো অভিযোগ আসলে কোটি কোটি ভারতীয় ভোটারের মর্যাদায় সরাসরি আঘাত। একইসঙ্গে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত লক্ষাধিক সরকারি কর্মীর সততা ও নিষ্ঠাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয় এই ধরনের মন্তব্য। নির্বাচন কমিশন মনে করছে, রাজনৈতিক লাভের জন্য এভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ছোট করা উচিত নয়।

   

কমিশন আরও জানায়, স্বাধীন ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচন থেকেই— অর্থাৎ ১৯৫১-৫২ সাল থেকে— ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’ (One Person, One Vote) নীতি কার্যকর। এই নীতির অধীনে প্রতিটি যোগ্য ভোটার কেবল একবার ভোট দেওয়ার অধিকার রাখেন। ইসির বক্তব্য, এই আইন ও প্রক্রিয়া কখনও পরিবর্তন হয়নি। তাই, এ নিয়ে ভুল বার্তা দেওয়া বা সন্দেহ ছড়ানো সম্পূর্ণভাবে ভুল এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ।

নির্বাচন কমিশন এদিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে— যদি কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি প্রমাণ দিতে পারেন যে কোনও ভোটার দুইবার ভোট দিয়েছেন, তবে সেই প্রমাণ শপথপত্র (sworn affidavit) সহ কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে। ইসির কড়া বার্তা, শুধুমাত্র অভিযোগ তুলে প্রচার করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কমিশনের এই কড়া প্রতিক্রিয়া মূলত সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার লাগাতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে। বিশেষত, রাহুল গান্ধী(Rahul Gandhi) তাঁর একাধিক জনসভা ও বক্তব্যে “ভোট চুরি” প্রসঙ্গ তুলে শাসক বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। বিজেপি নেতৃত্ব এই অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে দাবি করেছে। আর এদিন নির্বাচন কমিশনও একই সুরে বিরোধীদের এই অভিযোগকে নস্যাৎ করে দিল।

Advertisements

এদিকে, কমিশনের এই বিবৃতি প্রকাশের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও একটি তথ্য আলোচনায় এসেছে— নির্বাচনের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা প্রায় ১৬-এ থামতে পারে। যদিও এই সমীক্ষা কোনও সরকারি সূত্রে প্রকাশিত হয়নি, তবুও রাজনৈতিক মহলে এই তথ্য নিয়ে জোর চর্চা চলছে। শাসক শিবির মনে করছে, এই কারণেই বিরোধীরা ভোট প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল নিচ্ছে, যাতে আগে থেকেই ভোটারদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করা যায়।

ভোট গণনা, ভোটদানের স্বচ্ছতা ও ইভিএম ব্যবহারের মতো বিষয়গুলি নিয়ে বিরোধীদের তরফে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কিন্তু কমিশন বারবার দাবি করেছে, ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্বচ্ছ, সুরক্ষিত এবং নির্ভরযোগ্য। ইসির মতে, কোনও প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করা মানে দেশের গণতন্ত্র ও ভোটারদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন।

সব মিলিয়ে, ইসির এই বক্তব্যে রাজনৈতিক তরজা আরও তীব্র হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। বিরোধীরা এই মন্তব্যকে ‘সরকারপন্থী’ মনোভাব হিসেবে দেখাতে পারে, আর শাসক দল সেটিকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু মূল প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— রাজনৈতিক স্বার্থে কি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত, নাকি প্রমাণ-ভিত্তিক অভিযোগই হওয়া উচিত জনসমক্ষে?