মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে (Drug Racket) একটি বড় ধরনের মাদক পাচার চক্রের পর্দাফাঁস করেছে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। এই র্যাকেটটি জিম, ক্লিনিক এবং কলেজ ক্যাম্পাসে গভীরভাবে শিকড় গেড়েছিল। পুলিশ দুই মূল মাদক পাচারকারী, সাইফুদ্দিন (২৮) এবং আশু ওরফে শাহরুখ (২৮)-কে গ্রেফতার করেছে।
তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে, এই চক্রে জড়িত ছিলেন কিছু অসাধু ডাক্তার এবং জিম প্রশিক্ষক, যারা তরুণ-তরুণীদের মাদকাসক্তিতে ঠেলে দিচ্ছিলেন। পুলিশের হাতে ১৫.১৪ গ্রাম এমডি (মেফেড্রোন) পাউডার, একটি স্কুটি এবং একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যার মোট মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা।
ক্রাইম ব্রাঞ্চের তদন্তে জানা গেছে, এই র্যাকেটটি ভোপালের জিমগুলিকে মাদকাসক্তির প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করছিল। ফিটনেস-আগ্রহী তরুণদের বলা হতো যে, এমডি পাউডার “চর্বি দ্রুত কমায়” এবং “শক্তি বাড়ায়”। বিশেষ করে তরুণীদের লক্ষ্য করে তাদের “স্লিম এবং আত্মবিশ্বাসী” হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত।
একই সঙ্গে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের কিছু অসাধু ডাক্তার এমডি-কে চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছিলেন। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “তারা মাদককে ফিটনেস বুস্টার এবং মুড লিফটার হিসেবে প্রচার করছিল। বাস্তবে, এটি ছিল একটি ফাঁদ—একটি ডিজাইনার ড্রাগ, যা ওষুধের ছদ্মবেশে তরুণদের মাদকাসক্তি, যৌন শোষণ এবং অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল।”
এই চক্রটি ভোপালের হাই-এন্ড পার্টি ক্লাবগুলিতেও মাদক সরবরাহ করছিল। অভিযুক্তরা তরুণীদের ব্যবহার করে নতুন গ্রাহকদের আকর্ষণ করছিল। এই তরুণীদের প্রথমে বিনামূল্যে মাদক দেওয়া হতো, এবং পরে তাদের নতুন মুখ আনার কাজে লাগানো হত।
পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্র একটি ‘চেইন মার্কেটিং’ ব্যবস্থার মতো কাজ করছিল, যেখানে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে ব্যবহার করে আরও মানুষকে এই নেটওয়ার্কে টানা হতো। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাইফুদ্দিনের মাথায় ৫,০০০ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল, এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য মামলায় পলাতক ছিলেন।
এই অভিযানটি চালানো হয়েছে ভোপাল পুলিশ কমিশনার হরিনারায়ণ চারি মিশ্র এবং অতিরিক্ত কমিশনার পঙ্কজ শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বে। পুলিশ গোবিন্দপুরা থানার অধীনে সবজি বাজারে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এই দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (এনডিপিএস অ্যাক্ট)-এর ধারা ৮/২২-এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, এবং জড়িত ডাক্তার, জিম মালিক এবং ক্লাব পরিচালকদের চিহ্নিত করার জন্য তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এক্স-এ পোস্ট করা তথ্য অনুযায়ী, এই র্যাকেটে তরুণীদের মাদক দিয়ে শোষণ করা হতো, এবং তাদের ব্যবহার করে নতুন গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলা হতো। এই ঘটনা শহরের তরুণ প্রজন্মের উপর মাদকের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং এর সঙ্গে জড়িত অপরাধের গভীরতা প্রকাশ করে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই র্যাকেটটি শুধুমাত্র মাদক বিক্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি একটি সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক ছিল, যেখানে ডাক্তাররা মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার নামে এমডি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
জিম প্রশিক্ষকরা এটিকে ফ্যাট-বার্নিং সাপ্লিমেন্ট হিসেবে প্রচার করছিলেন। তরুণরা প্রথমে বিনামূল্যে মাদক পেত, এবং আসক্ত হওয়ার পর তাদের উচ্চ বেতনের চাকরি এবং বিলাসবহুল জীবনযাত্রার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নেটওয়ার্কে আরও গভীরভাবে টেনে নেওয়া হতো।
এই ঘটনা ভোপালে মাদকের ক্রমবর্ধমান সমস্যার একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান মাদক মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ভোপাল এবং ইন্দোর-সহ রাজ্যের ১৫টি জেলায় মাদক মাফিয়ারা সক্রিয়। এই অভিযান মাদক নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে পুলিশের চলমান প্রচেষ্টার একটি অংশ, এবং আরও গ্রেপ্তার এবং তথ্য প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।
দলই দিচ্ছে ট্রেন-বাসের ভাড়া! একুশে জুলাইয়ের আগে উত্তপ্ত দক্ষিণ দিনাজপুর
এই ঘটনা সমাজে মাদকাসক্তির বিপদ এবং এর সঙ্গে জড়িত নৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলির উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। ভোপালের তরুণ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং সুস্থ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে পুলিশ এবং প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।