ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (droupadi murmu) শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক ও সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক, মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ উৎপাদন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জর্জ কুরিয়ান।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক্স-এ একটি পোস্টে জানিয়েছেন, “রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (droupadi murmu) ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় মহামান্য পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং প্রতিমন্ত্রী জর্জ কুরিয়ান।”
পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণ ও ভারতের শোক (droupadi murmu)
২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮৮ বছর বয়সে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় তাঁর বাসভবনে পোপ ফ্রান্সিস প্রয়াত হন। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শের পর তিনি রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ হিসেবে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
তাঁর মৃত্যুতে ভারত সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। ২২ ও ২৩ এপ্রিল দুই দিন এবং ২৬ এপ্রিল, তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন, এক দিনের শোক পালন করা হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৬ এপ্রিল সারা ভারতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং কোনো সরকারি বিনোদন অনুষ্ঠান হবে না।
রাষ্ট্রপতির ভ্যাটিকান সফর
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (droupadi murmu) ২৫ থেকে ২৬ এপ্রিল ভ্যাটিকান সিটি সফরে রয়েছেন। তিনি ভারত সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শোক প্রকাশ করতে এবং তাঁর রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে এই সফরে গেছেন।
২৬ এপ্রিল তিনি সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টি মাসে অংশ নেবেন, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, “মহামান্য পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে করুণা, নম্রতা এবং আধ্যাত্মিক সাহসের প্রতীক হিসেবে স্মরণীয় থাকবেন।”
পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরাধিকার
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর জীবন দরিদ্র ও দুঃখীদের সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি খ্রিস্টের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন এবং দুঃখীদের মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন। তাঁর নম্রতা এবং সকলকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা তাঁকে বিশ্বব্যাপী সম্মান অর্জন করেছিল।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (draupadi murmu) তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে এক্স-এ লিখেছেন, “মহামান্য পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে গভীরভাবে মর্মাহত। তাঁর ভারতের মানুষের প্রতি স্নেহ সবসময় স্মরণীয় থাকবে। তাঁর আত্মা ঈশ্বরের কোলে শান্তি লাভ করুক।” মোদী তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে বলেন, পোপের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতি তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিবরণ
ভ্যাটিকান জানিয়েছে, পোপ ফ্রান্সিসের মরদেহ লাল পোশাকে সজ্জিত, মাথায় পোপের মিটার এবং হাতে রোজারি নিয়ে একটি খোলা কফিনে রাখা হয়েছে। এই ছবি কাসা সান্তা মার্তার চ্যাপেলে তোলা হয়েছে। অন্ত্যেষ্টি মাসের নেতৃত্ব দেবেন কলেজ অফ কার্ডিনালসের ডিন জিওভান্নি বাত্তিস্তা রে। মাসের শেষে কার্ডিনাল রে চূড়ান্ত কমেন্ডেশন প্রার্থনা পাঠ করবেন, যার মাধ্যমে পোপকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈশ্বরের হাতে সমর্পণ করা হবে। এরপর তাঁর মরদেহ সেন্ট মেরি মেজরে সমাধিস্থ করা হবে।
ভারতের পদক্ষেপ
পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণের পর ২২ এপ্রিল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং নয়াদিল্লির অ্যাপোস্টলিক নানসিয়েচারে (হলি সি-র দূতাবাস) গিয়ে শোকবার্তা স্বাক্ষর করেন। ভারত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে পোপের প্রতি সম্মান প্রকাশ করেছে। এই পদক্ষেপ ভারতের ক্যাথলিক সম্প্রদায় এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে।
ভারত-ভ্যাটিকান সম্পর্ক
ভারত ও ভ্যাটিকানের মধ্যে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। পোপ ফ্রান্সিস ভারতের প্রতি বিশেষ স্নেহ প্রদর্শন করেছিলেন এবং ধর্মীয় সহনশীলতা ও সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ভ্যাটিকান ভারতের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সেতু গড়ে তুলেছিল। রাষ্ট্রপতি মুর্মুর ভ্যাটিকান সফর এই সম্পর্কের গভীরতা প্রতিফলিত করে।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভ্যাটিকান সফর এবং পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ভারতের সহানুভূতি ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতির প্রতীক। পোপ ফ্রান্সিসের করুণা, নম্রতা এবং আধ্যাত্মিক সাহস বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী ছাপ রেখেছে। তাঁর প্রয়াণে ভারতের রাষ্ট্রীয় শোক এবং রাষ্ট্রপতির সফর তাঁর প্রতি গভীর সম্মান প্রকাশ করে। পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বিশ্বের নেতাদের একত্রিত করবে, এবং ভারতের উপস্থিতি এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে তাৎপর্যপূর্ণ হবে।